হোম » Uncategorized » খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমন ধান রোপনে ব্যস্ত

খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমন ধান রোপনে ব্যস্ত

জাহিদুল হক মিন্টু, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা, আত্রাই ও রাণীনগরে বন্যায় ডুবে যাওয়া মাঠে জেগে উঠছে। সেই সব মাঠে আমন ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলায় চলতি মৌসুমে ২ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধান চাষে করার লক্ষে চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নওগাঁয় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩শ’ ২৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। বাঁকি জমিগুলোতে পানি নেমে যাওয়ার পর এবং আউশ ধান কাটা মাড়াইয়ের সাথে সাথে আমন ধান লাগানো হবে।

চলতি আমন মৌসুমে জেলার মান্দা, আত্রাই, রাণীনগর, সদর, সাপাহার, পোরশা ও ধামইরহাটে রোনপকৃত প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি বন্যায় তলিয়ে যায়। তবে বন্যায় ১শ’ ৯৬ হেক্টর জমির আমন ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সে সব তলিয়ে যাওয়া এসব জমি বা মাঠ থেকে পানি নেমে যাওয়ায় সাথে সাথে কৃষকরা জমির আগাছা পরিষ্কার করে ধান রোপন শুরু করেছেন।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর জানায়, নওগাঁ সদর উপজেলায় হাইব্রিড জাতের ৯৫ হেক্টর, উফশী জাতের আট হাজার ৬শ’ ৬০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯শ’ ৯৫ হেক্টরসহ মোট ৯ হাজার ৭শ’ ৫০ হেক্টর, মান্দায় হাইব্রিড জাতের ১০ হেক্টর, উফশী জাতের ১৩ হাজার ২শ’ ৮৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২ হাজার ৪৬০ হেক্টর, আত্রাইয়ে হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার হেক্টর, উফশী জাতের ৩ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২ হাজার ১শ’ ২৫ হেক্টরসহ ৫ হাজার ১শ’ ৩০ হেক্টর, রাণীনগরে হাইব্রিড জাতের ১০ হেক্টর, উফশী জাতের ১৭ হাজার ৮শ’ ৩০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২শ’ ৪৫ হেক্টরসহ মোট ১৮ হাজার ৮৫ হেক্টর, বদলগাছীতে হাইব্রিড জাতের ১০ হেক্টর, উফশী জাতের ১২ হাজার ২শ’ ৬০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৫শ’ হেক্টরসহ মোট ১৩ হাজার ৭শ’ ৭০ হেক্টর,

পত্নীতলায় হাইব্রিড জাতের ২০ হেক্টর, উফশী জাতের ২৫ হাজার ৪শ’ ৩০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩ হাজার হেক্টরসহ মোট ২৮ হাজার ৪শ’৫০ হেক্টর, মহাদেবপুরে হাইব্রিড জাতের ১০ হেক্টর, উফশী জাতের ১৮ হাজার ২৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১০ হাজার ৩শ’ হেক্টরসহ মোট ২৮ হাজার ৩শ’ ৩৫ হেক্টর, ধামইরহাটে হাইব্রিড জাতের ৭৫ হেক্টর, উফশী জাতের ১৯ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৭শ’ ১৫ হেক্টরসহ মোট ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর, সাপাহারে হাইব্রিড জাতের পাঁচ হেক্টর, উফশী জাতের ১০ হাজার ২০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের দুই হাজার ৫০ হেক্টরসহ মোট ১২ হাজার ৭৫ হেক্টর, পোরশায় হাইব্রিড জাতের ৫ হেক্টর, উফশী জাতের ১৫ হাজার ৪২০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১ হাজার ২শ’৭০ হেক্টরসহ মোট ১৬ হাজার ৬শ’ ৯৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে হাইব্রিড জাতের ৫ হেক্টর, উফশী জাতের ২৫ হাজার ২শ’৪০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ৪শ’ ২০ হেক্টরসহ মোট ২৯ হাজার ৬শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বাজারে ইরি-বোরো ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি বাজারে দামও বেশ ভালো পেয়েছেন চাষিরা। ফলে সব মিলিয়ে আমন ধান চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা । মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা গ্রামের কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, বোরো মৌসুমে আট বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। দামও সন্তোষজনক পেয়েছি। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। বাকি জমি একটু নিচু হওয়ায় ফেলে রেখেছি। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে জমিতে ধান রোপন করা হবে। এ বছর আমন চাষে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে জমি চাষাবাদ করা হয়েছে।

রাণীনগর উপজেলার গৌড়দিঘী গ্রামের স্বপন সরকার জানান, বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে গিয়েছিল সে কারণে আমন ধান রোপন করা সম্ভব হয়েছিল না। তবে গত কয়েকদিন থেকে পানি নেমে যাওয়ায় জমির আগাছা পরিষ্কার করে তার মতো অনেক কৃষকরা জমিতে ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

নওগাঁ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, সরকারি নির্দেশণা অনুসারে কোন জমি যেন পতিত না থাকে সে জন্যে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে। ধানের ভালো দাম পাওয়ায় আমন মৌসুমে জেলায় ২ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান চাষ হবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে।

error: Content is protected !!