হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » বগুড়ায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

বগুড়ায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধিঃ  বগুড়ার নন্দীগ্রামে দুইশো টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদে এতিমসহ দুই কিশোরকে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। কয়েক দফায় অমানবিক নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 
গত বুধবার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামুইট তিনমাথা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
সড়কের মাঝখানে কড়ইগাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার দুই কিশোর উপজেলার তাঁরাটিয়া এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মুর্শিদুল ও ভাটরা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সুমন।
সোমবার নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজমগীর হোসাইন আজম বলেন, চুরির অপবাদে গাছে বেঁধে হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। ভিডিওসহ তথ্য পেয়েই অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নামুইট তিনমাথা বাজারে ওয়াক্ত নতুন জামে মসজিদের দানবাক্স থেকে টাকা চুরির অভিযোগ তুলে দুই কিশোরকে রাস্তা থেকে ধরে আনে নামুইট গ্রামের মোড়ল নজরুল ও কাচু প্রামানিক।
পরে গ্রামের কয়েকজন মোড়ল একত্রিত হয়ে দুই কিশোরকে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে সালিশ বসায়।
অমানবিক নির্যাতন ও গাছে বেঁধে হেনস্তার সময় গ্রাম্য মোড়লদের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা পায়নি দুই কিশোর।
এতিম মুর্শিদুলকে নির্যাতনের সময় তার ভিক্ষুক মা মোড়লদের পায়ে পড়ে কান্না করলেও সন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি।
তারা আহত হলেও চিকিৎসা করানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সড়কের মোড়ে নির্যাতনের সময় শতশত জনতা ভিড় করেন। যানবাহন থামিয়ে চালক, যাত্রী, পথচারি ও স্থানীয়রা দাঁড়িয়ে থেকে দর্শকের মতো নির্যাতন দেখেন। দুই কিশোরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। তবে কয়েকজন ব্যক্তি মারধর না করার অনুরোধ করলেও গ্রাম্য মোড়লরা ছিল বেপরোয়া।
নির্যাতনের শিকার সুমন জানায়, তারা বাবা-ছেলে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। সকালে দুই বন্ধু অটোভ্যান নিয়ে নন্দীগ্রাম শহরের দিকে যাচ্ছিলো। নামুইট মোড়ে ভ্যান থামানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে চোর চোর করে চিৎকার করে নামুইট গ্রামের মাতব্বর নজরুল।
কয়েকজন মোড়ল ও স্থানীয় লোকজন এসে যাচাই না করেই দুই কিশোরকে মারতে মারতে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোর আখ্যা দিয়ে একঘন্টা অমানবিক নির্যাতন করা হয়।
প্রমাণ ছাড়া মারধরের বিষয়ে উপস্থিত কয়েকজন প্রশ্ন তোলায় দুই কিশোরকে মসজিদের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় আধাঘন্টা নির্যাতনের পর দুই কিশোরকে নামুইট তিনমাথা মোড়ে এনে কড়ইগাছে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে।
গ্রাম্য মোড়লরা দাবি করেন, ফজর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার পর দুই কিশোর দানবাক্স থেকে টাকা চুরি করে। তাদেরকে আটক করে শাসন করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড নামুইটের সাবেক কাউন্সিলর রহমত আলী বলেন, মসজিদে টাকা চুরির কারণে দুইজনকে শাসন করেছে। তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করেছি। জানানোর পরও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি।
error: Content is protected !!