হোম » সারাদেশ » সেতুর অভাবে লাখো মানুষ দুর্ভোগ

সেতুর অভাবে লাখো মানুষ দুর্ভোগ

অর্ণব আল আমিন, বাসাইল, টাঙ্গাইলঃ বাসাইল উপজেলার রাশড়া গ্রাম ও সখীপুরের চাকদহ গ্রাম। এই দুই উপজেলার সীমান্ত চিহ্নিত করে বংশাই নদীর দুই পাড়ে এই দুটি গ্রামের অবস্থান। এই নদী পার হতে বাঁশের সাঁকো আর নৌকায়। যুগ যুগ ধরে দুই পাড়ের লাখো মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ এই পোহাচ্ছেন ।

স্বাধীনতার আগে এখানে গড়ে ওঠে চাকদহ হাট। এই হাট দুই উপজেলার প্রায় ৩১টি গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা রাশড়া-চাকদহ এলাকার খেয়াঘাট। ওই ঘাটে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে এসব গ্রামের মানুষ সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে। বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে বহুবার। দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিবারই সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বংশাই নদীর পূর্বপাড়ে চাকদহ, রতনপুর, আগ-চাকদহ, বালিয়াহাটা, যাদবপুর, হাতীবান্ধা, কুমিরাজুড়ি, কামিলিয়াচালাসহ সখীপুরের ১০টি গ্রাম। রাশড়া-চাকদহ খেয়াঘাট ব্যবহার করেই বাসাইল উপজেলা সদর এবং জেলা শহরে যাতায়াত করে এ এলাকার জনসাধারণ।

নদীর পশ্চিম পাড়ে রাশড়া, সৈদামপুর, মিরিকপুর, ঢংপাড়া, হালুয়াপাড়া, কাঁঠালতলী, পূর্বপৌলী, সিংগারডাক, যৌতুকী, তারাবাড়ি, কাঞ্চনপুর, ব্রাহ্মণপাড়িল, হান্দুলীপাড়া, ডৌহাতুলিসহ বাসাইলের ২১টি গ্রাম। তাঁরাও ওই খেয়াঘাট ব্যবহার করছে চাকদহ বাজারে যাতায়াতে।

এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন বেচাকেনার একমাত্র ভরসা ওই চাকদহ হাট। পরিবহনে সুবিধা না থাকায় এসব এলাকায় উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যে পাচ্ছেন না লোকজন। পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। প্রায় সাড়ে নয় কিলোমিটার পথ ঘুরে বাসাইল বা সখীপুর সদরে যাতায়াত করেন লোকজন। চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে উপজেলা ও জেলায় যাতায়াতে প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা।

এ ব্যাপারে সখীপুরের হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘চাকদহ হাটের পাশে বংশাই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতু হলে এ এলাকার মানুষের বাসাইল সদর ও টাঙ্গাইল যাওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি হাবলা, কাঞ্চনপুর ও সদর ইউনিয়নের মানুষের চাকদহ হাটের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে।’

স্থানীয় হাটের ইজারাদার সোহরাব হোসেন বলেন, দেড় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম এই খেয়াঘাটের নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে এই এলাকার ছেলেমেয়েদের অনেকের বিয়ের সম্বন্ধও ভেঙে গেছে।

বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, সাংসদ জোয়াহেরুল ইসলামের সুপারিশে ওই এলাকার সেতুর চাহিদা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এলজিইডির নতুন প্রকল্পে এই সেতুর জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। দুই বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলের সেতুর অভাব খুব দ্রুত লাঘব হবে।

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, গণমানুষের দুর্ভোগ লাঘবে চাকদহ বাজারের পাশে সেতু নির্মাণ করা অতি জরুরি। এ সেতু নির্মাণের বিষয়টি একটি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। শিগগির সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে মাটি পরীক্ষা হবে।

সাংসদ অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, বংশাই নদীর ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতুসহ এই এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট পাকা করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুসহ এলাকা উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।

error: Content is protected !!