হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » ক্যাম্পে আগুন, চরম দুর্ভোগে ১২ হাজার রোহিঙ্গা

ক্যাম্পে আগুন, চরম দুর্ভোগে ১২ হাজার রোহিঙ্গা

আওয়াজ অনলাইন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ২ হাজার বসতির ১২ হাজার রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নেই খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি। তীব্র গরমের চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বসতি হারা এসব রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-১১ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

তবে, এরই মধ্যে পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলো পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আর দ্রুত মাথা গোঁজার ঠাঁইসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় শুধু ধ্বংসস্তূপ। আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয় শিবিরের ২ হাজার বসতি। পুড়ে যাওয়া বসতিতে ফিরেছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। কিন্তু নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে সাহায্যের অপেক্ষায় ক্ষতিগ্রস্তরা।

ক্যাম্প-১১ ডি ব্লকের রোহিঙ্গা নারী আশেয়া খাতুন জানান, ধ্বংসস্তূপের পাশে পাহাড়ি ঢালুতে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সকালে আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপে বসে নিজের ঘরের চিহ্ন বের করার চেষ্টা করছেন। তবে তখনও পর্যন্ত কোন ধরণের সহায়তা পাননি।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক রোহিঙ্গা সবকিছু হারিয়ে এখন ধার-দেনা করে কিনছেন বাঁশ ও কাঠ। যা দিয়ে তীব্র গরম থেকে পরিবারকে বাঁচাতে চলছে অস্থায়ী আবাস তৈরির চেষ্টা। সোমবার বেলা ১২টা থেকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিষ্কারে নেমেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাস উপযোগী করে তোলা হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

কেয়ার বাংলাদেশের টিম লিডার মো. ইলিয়াছ সুজন বলেন, কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত ক্যাম্পের বসতিগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। এসব পরিষ্কারের পর দ্রুত সময়ে মধ্যে রোহিঙ্গাদের বসতির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা বলেন, সোমবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে সহযোগিতা করা শুরু করেছে। বাঁশ-তাঁবু দিয়ে রোহিঙ্গাদের বসতি করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ বা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে, যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ কর্মী কাজ করছেন।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই হাজারের বেশি ঘর (শেল্টার) পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। ক্যাম্প-১১ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা থাকেন ৩২ হাজার ২০০ জন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লার্নিং সেন্টার, ত্রাণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

রোববার (৫মার্চ) বিকাল ৩টায় বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যু হয়, আর আহত হয় ৫ শতাধিক। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।

error: Content is protected !!