হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » ঢাকার শেওড়াপাড়ায় দুবৃত্তদের ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক নিহত

ঢাকার শেওড়াপাড়ায় দুবৃত্তদের ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক নিহত

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় রোববার ভোরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত আহমেদ মাহি বুলবুল। ৩৪ বছর বয়সী চিকিৎসক বুলবুল ‘ভূমি’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন। বর্তমানে তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্তসহ সব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলে বুলবুলের মরদেহ রংপুরে গ্রামের বাড়িতে আনা হবে বলে জানান পরিবারের লোকজন।

এদিকে ডা. বুলবুলের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি রংপুর মহানগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের ভগিবালাপাড়ায় চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের আহজারিতে এখন বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছে। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন মরদেহ আসবে। স্বজনসহ প্রতিবেশিরা এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান। সন্তানের শোকে বুলবুলের মা বারবার মনে করছেন ছেলের সঙ্গে শেষ কথার। বুলবুলের বিধবা মা বুলবুলি বেগম বলেন, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিয়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ওর বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে মোবাইলে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছে। ২০ রমজানে বাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে। প্রশাসন একটু খতিয়ে দেখলে আসল ঘটনা বের হবে। মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখুক। আমার ছেলের তো কোনো শত্রæ নেই। তারপরও এই ঘটনা কেন ঘটলো? ছেলের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি বিচার চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ভগিবালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ডা.বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। এছাড়াও ভুমি নামের তার এরও একটি সংগঠন রয়েছে। এর বাইরে তিনি কিছু ঠিকাদারি কাজ করতেন। দিনাজপুরে বিয়ে করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আট বছরের মেয়ে আহমেদ আফনা নাউন ও সামি নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে বুলবুলের। কী কারণে বা কেন এ হত্যাকান্ডের শিকার বুলবুল তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনরা।

বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ রাহি বকুল বলেন, রোববার সকালবেলা ফোনে খবর পাই ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছি না । যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড় ভাই বুলবুল।চিকিৎসাপেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে আজ নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। এখন ভাই নেই। দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দিন পার করবেন। স্বজনসহ প্রতিবেশিরা এই হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাফফার হোসেন বলেন, সকালে তার মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরেছি। তবে এখনো মরদেহ রংপুরে পৌঁছায়নি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। এই হত্যাকাÐের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা উদঘাটন করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ছেলে হিসেবে ডা. বুলবুল খুব ভালো ছিলেন। তিনি বিএনপিপন্থী মানুষ। ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন-নবী খান সোহেলসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। এখন তার হত্যাকান্ডের ঘটনার নেপথ্যে জড়িতরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে নাকি অন্য কোনো কারণে তাকে ছুরিকাঘাত করেছে, সেটা প্রশাসনকে বের করতে হবে। আমরা চাই অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হোক।
এদিকে ডা. বুলবুলের মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

error: Content is protected !!