হোম » সারাদেশ » ধর্ম হচ্ছে সমস্ত মানুষের কল্যাণ সাধন করা

ধর্ম হচ্ছে সমস্ত মানুষের কল্যাণ সাধন করা

মোহাম্মদ হানিফ: ধর্ম মানব জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় বিধি-বিধান আমাদেরকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে। ধার্মিকতা আর ধর্মান্ধতা এক জিনিস নয়। ধার্মিকতা মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যায় আর ধর্মান্ধতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষ নিজের থেকে তার প্রিয় মানুষকে বেশি ভালোবাসে। তাই আমরা সব সময় তাদের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। মানুষ একে অপরকে নিয়ে চিন্তিত থাকে তারা যেনো কোনো কারণে কষ্ট না পায়।
 মানুযের মধ্যে   কতই না হুর হাঙ্গামা, ঝুট ঝামেলা, মারামারি, কাটাকাটি, জাতিগত ভেদাভেদ, ধর্মে ধর্মে দ্বন্দ্ব, মানুষে মানুষে খুনাখুনি, গালাগালিতে ব্যস্ত। কিন্তু কখনও কি মানুষ নামের মানবজাতিকে আলাদা করা গেছে? সকলের সৃষ্টির উৎস তো ওই একজনই। কেউ ডাকে আল্লাহ, কেউ ভগবান, কেউ ঈশ্বর, কেউ প্রভু, কেউ সৃষ্টিকর্তা, কেউ বা অবিনশ্বর। এই তো। কেউ কি কখনও সৃষ্টির স্রষ্টাকে অস্বীকার করেছে? অস্বীকার হয়েছে? হয়নি।
এই মানুষই বিভিন্ন সময়ে স্বার্থের জন্য জাতিগত দ্বন্দ্ব, দেশে-দেশে দ্বন্দ্ব, ধর্মে-ধর্মে দ্বন্দ্ব, গায়ের রং বেরং এ দ্বন্দ্ব, সাদা-কালো দ্বন্দ্ব, উঁচু-নিচু দ্বন্দ্ব, ধনী-গরিব দ্বন্দ্ব, পেশাজীবী-অপেশাজীবী দ্বন্দ্ব। কতই না দ্বন্দ্ব! কতই না অস্ত্রের ঝনঝনানি? কিন্তু কোনো দ্বন্দ্বই কখনও মানুষে মানুষের পরিচয়কে অস্বীকার করতে পারেনি। প্রকৃত মানুষ হতে হলে আমাদের চাই পরস্পরের প্রতি অন্তরের ভালোবাসা, চাই স্নেহ, করুণা, স্বার্থপরতাহীনতা। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে দেখা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কীভাবে চলছে হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ইত্যাদি পাপকর্ম। এটাই কি প্রকৃত মানবের মনুষ্যত্বের পরিচয়?
মুসলিম জাতির সৃষ্টি সবার আগে হয়েছে। মানব জাতির প্রথম পুরুষ এবং আদি পিতা ছিলেন মুলমান। তিনি আল্লাহর নবীও ছিলেন। পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ধর্ম হলো ইসলাম। এরপর বিভিন্ন সময়ে ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি ধর্মমতের সৃষ্টি হয়েছে। মানবজাতির প্রথম ও প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলামেরই পূর্ণাঙ্গ ও সর্বশেষ স্থায়ী রূপ হজরত মুহাম্মদ সা.-এর আনীত ইসলাম।
প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তুলতে হলে সর্বপ্রথম নিজের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে হবে। অন্তরচেতনাকে জাগ্রত করতে হবে। বর্তমান সমাজে মানুষ হয়ে উঠেছে আত্মকেন্দ্রিক। তারা সর্বদাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তারা নিজের বৈষয়িক চিন্তায় এতই মগ্ন যে, অন্যের সুখ-দুঃখ নিয়ে চিন্তা করার সময় তাদের থাকে না। মানুষের এ স্বার্থান্বেষী চিন্তাধারার জন্য তারা মানুষের প্রকৃত রূপ থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
যখনই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসেছে মানবসৃষ্টির সেরা জীবের ওপর তখনই মানুষ মানুষ কেমন করে যেন এক হয়ে গেছে। এটাই তো ধর্ম। এটাই তো বর্ণ। এটাই তো মানুষের অস্তিত্ব। এটাই তো মানবজাতি। এর আবার ভেদাভেদ কিসের?
সব মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এবং সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। পৃথিবীর একই জলহাওয়ায় আমরা বেড়ে উঠি। আমাদের সবার রক্তের রং লাল। তাই মানুষ একে অন্যের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে   আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন,, আমাদের একটি পরিচয় আমরা মানুষ। কখনাে কখনাে স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমরা জাত-কুল-ধর্ম-বর্ণের শিক্ষিত অশিক্ষিত  ধনী-গরীব  কালো সাদা  জাত কুল  পার্থক্য তৈরি করে মানুষকে দূরে ঠেলে দিই, এক দল আরেক দলকে ঘৃণা করি, আওয়ামী  বিএনপি জামাত জাতীয় পার্টি হেফাজত ইসলামী আন্দোলন  জাসদ কমিউনিস্ট ইত্যাদি
পশ্চাতে ফেলতে চাই, পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হই। কিন্তু এগুলাে আসলে সাময়িক। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, আমরা একে অন্যের পরম  বন্ধু আত্মীয়-স্বজন । আমাদের উচিত সবাইকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা। প্রত্যেককে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া এবং তার অধিকার সংরক্ষণে একনিষ্ঠ থাকা। মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ব্রাহ্মণ-শূদ্র,, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি  , কেন্দ্রবাসী-প্রান্তবাসী এমন ভাগাভাগি কখনােই কাম্য হতে পারে না।  এই বৈষম্যতার কারণে আমরা একে অপরকে অনেক দূরে ঠেলে দিচ্ছি  । তাতে মানবতার অবমাননা করা হয়। তাই আধুনিক কালে এক বিশ্ব, এক জাতি চেতনার বিকাশ ঘটছে দ্রুত। আর প্রতিদিনে বাড়ছে  হানাহানি মারামারি খুন ।
মানব জাতির একই একাত্ম-ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে , দেশে দেশে মারামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ক্ষমতার লড়াই । মানুষ সংঘাত-বিদ্বেষমুক্ত শান্তিপূর্ণ এক বিশ্ব প্রতিষ্ঠা না করে  দিন দিন পার্থক্যের দিকে যাচ্ছি। । সর্বত্র মনুষ্যত্বের জয়গাথা ঘােষিত না করি  হাহাকারের দিকে যাচ্ছি।
সব ধর্ম-বর্ণ-গােত্রের মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে  বিশুদ্ধভাবে ভালােবাস না দিয়ে  সবাইকে হাহাকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে  অনিশ্চিত এক অন্ধকার পৃথিবীর দিকে। প্রকৃত মানুষ হতে হলে আমাদের চাই পরস্পরের প্রতি অন্তরের ভালোবাসা, চাই স্নেহ, করুণা, স্বার্থপরতাহীনতা।
বর্তমানে এ পৃথিবীতে  রথ চলছে মিথ্যা ও ছল নামক ইন্ধনের দ্বারা। এ রথে যারা চলছে, তাদের প্রকৃত মানুষ বলা যায় না। তাদের ভণ্ডামির জন্য বর্তমান মানবসমাজ ধূলিসাৎ হচ্ছে। এ ধূলিসম অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্য চাই প্রকৃত স্নেহ ও ভালোবাসা, যার দ্বারা আমরা এ বিশ্বের মানুষের মন জয় করতে পারব। একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার জন্য নিজের ভাবাধারার পরিবর্তন ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। যে ব্যক্তি জগতের সব ব্যক্তিকে নিজের বন্ধু, ভাই, পিতা ও নারীদের নিজের বোন, মা হিসেবে দেখেন, সে ব্যক্তিই প্রকৃত মানুষ। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশই স্বার্থপর। এ কারণেই বর্তমানে মানুষ অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে যতই উন্নতি করি না কেন, প্রকৃত মানুষ না হতে পারলে এ উন্নতির কোনো মূল্য নেই।
আমাদের হারিয়ে যাওয়া এ মনুষ্যত্ববোধ ও চারিত্রিক গুণাবলি ফিরিয়ে আনতে চাই পারস্পরিক সম্প্রীতি। পরিতাপের বিষয় আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রদায়গত ভেদবুদ্ধি মানুষের প্রতি আচরণে ঘৃণ্য বর্বরতায় মেতে উঠেছে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর কলঙ্ক লেপন করছে। মনুষ্যত্বহীন মানব পানিবিহীন সাগরের মতো। পানিহীন সাগরের যেমন পরিচয় পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনি মনুষ্যত্বহীন মানুষেরও কোনো পরিচয় নেই। মনুষ্যত্ব আমাদের অন্তরের বিষয়। আর এ অভ্যন্তরীণ বিষয়কে জাগ্রত করতে আমাদের চাই আন্তরিক ইচ্ছা। এ মনুষ্যত্ব গড়ে তোলার জন্য আমাদের চাই মানসিক শক্তি, অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, যা আমাদের প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে ও বিভিন্ন বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। এ সংগ্রামে জয়ী হলেই আমরা প্রকৃত মানুষ হতে পারব।
রূপ অতি সুন্দর; কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ রূপ বড়ই জটিল। অনেক সময় বিভ্রান্তিকর মরীচিকার মতো। মানুষও জগতের মতোই। তারা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, লিপ্সা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অন্যকে মিথ্যা প্রলোভনে বিভ্রান্ত করে। এটি মনুষ্যত্ব নয়। এটি ভীষণ পরিতাপের বিষয়। সময় থাকতে আমরা যদি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে না পারি, তাহলে আমাদের পতন নিশ্চিত।
এ পতন থেকে উঠে দাঁড়াতে হলে আমাদের অন্তর-আত্মাকে উন্নত করতে হবে। আমাদের স্বার্থপরতা বিসর্জন দিয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। তা হলেই মিলবে আমাদের মুক্তি, নতুবা আমাদের মানব-অধিকার নিরর্থক।ভবিষ্যতের এ আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে সদ্যোজাত শিশুই আমাদের আগামী দিনের দিশারি। তাদের উপযুক্ত ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে এ কলুষিত জগৎ একটি নির্মল স্বাস্থ্যবান জগতে পরিণত হবে। আর এ প্রজন্মকে উপযুক্ত দিশা দেওয়ার জন্য বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের উপযুক্ত ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে দিন শেষে মানুষ একই। নদী, সাগর, আকাশ বাতাস, চন্দ্র, সূর্য,আলো,অন্ধকারে অবস্থানরত দেশগুলোর নাম আলাদা হলেও বসবাসরত জীবগুলোর পরিচয় মানুষ। ক্ষমতার মোহে নয় মানবতার মোহেই হোক মানবিক বিশ্বের পরিচয়। সচেতন হই মানুষের পাশে দাঁড়াই,   এটুক আমাদের সকলের আদর্শ এবং উদ্দেশ্য । শেষ কথাটি হল এমন কারো সঙ্গী হন যে আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ধর্ম হচ্ছে সমস্ত মানুষের কল্যাণ সাধন করা।
error: Content is protected !!