হোম » সারাদেশ » রিফিউজি জীবন আর চাইনা, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই আমাদের নাগরিকত্বা নিশ্চিত করতে হবে 

রিফিউজি জীবন আর চাইনা, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই আমাদের নাগরিকত্বা নিশ্চিত করতে হবে 

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী কক্সবাজার: ‘নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে আমরা  বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছি। দীর্ঘদিন এদেশে অবস্থান করছি। কিন্তু আর নয়, রোহিঙ্গা হিসেবে নাগরিকত্ব ও ভিটে-বাড়ির নিশ্চয়তা দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে (মিয়ানমার) নিন। রিফিউজি জীবন আর চাইনা, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই।’
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব কথা বলেছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা।
তারা বলেন, ‘রেশন কমিয়ে দেয়া, ফিরতে ইচ্ছুকদের জাতিসংঘ কর্তৃক রেশন বন্ধ করা রহস্যজনক। বাংলাদেশের সাধারণ রোহিঙ্গারা ভালো আছে, কিন্তু অতিথি হয়ে এখানে আর থাকতে চাই না।‘
মিয়ানমারে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ নিপীড়নে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনক ভাবে অতিসহসা ঘরে ফেরার দাবিতে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।
গণহত্যার বিচার, পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন দাবিতে উখিয়ার পালংখালীর তাজনিমারখোলা, সুলিমুল্লাহ কাটা, কুতুপালং লম্বাশিয়া, বালুখালী পানবাজার ক্যাম্পসহ ২৩টি ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে এসব রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বেলা সোয়া ১০টা হতে পৃথকভাবে শুরু হওয়া মানববন্ধন ও সমাবেশ চলে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। তীব্র গরম উপেক্ষা করে ‘গো ব্যাক হোম- প্রতিপাদ্যে চলমান মানববন্ধনে নানা দাবি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্প ও ব্লক ভিত্তিক কমিউনিটি রোহিঙ্গা নেতারা। এসময় উপস্থিত রোহিঙ্গারা একবাক্যে দাবি করে- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস এন্ড গো হোম।’
বার বার প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক হলেও কোন মতেই শুরু হচ্ছে না প্রত্যাবাসন। তাই, দ্রুত প্রত্যাবাসন ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানববন্ধনে জড়ো হয়ে যান হাজারো রোহিঙ্গা। মানববন্ধন ধীরে ধীরে সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে তারা ২০১৭ সালে তাদের উপর ঘটে যাওয়া হত্যা, ধর্ষণসহ নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন কামনা করেন তারা।
এসময়  নিরাপদ আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা স্বগোত্রীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এদেশের সরকার ও জনগণের মনখারাপ হয় এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবপ। আমাদের অনেকে মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে পুরো আশ্রিত রোহিঙ্গা কওমকে লজ্জায় ফেলেছেন। প্রত্যাবাসন দ্রুত করার দাবি আমরা করলেও তা নিশ্চিত হতে কতদিন লাগে তার সঠিক হিসাব নেই। ততদিন যেন বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণ আমাদের সুন্দর মনে আশ্রয় দেন, সেই পরিস্থিতি বজায় রাখুন।
কুতুপালং ক্যাম্প-১, ওয়েইস্টেনর সাব মাঝি মো. হামিদ উল্লাহ্ বলেন, ‘এদেশে সেবা সুবিধা সব পাচ্ছি। কিন্তু নিজের দেশে যে ভিটে-জমি ফেলে এসেছি, নিজের জাতীয়তা মিয়ানমারে তাই এদেশে চিরস্থায়ী হতে চাই না আমরা।’
রোহিঙ্গা রাহমা খাতুন বলেন, ‘নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের হত্যা করে আগুনে নিক্ষেপ, গর্ভবতীর নারীর পেট কেটে মা-বাচ্চা দুজনকেই হত্যার মতো বর্বরতা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে কি না জানি না। প্রাণ বাঁচাতে অন্যায়ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই মর্যাদায় বার্মায় (মিয়ানমার) ফিরতে চাই।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন অবিলম্বে মিয়ানমারে নিজেদের বসতভিটায় ফিরতে চায়। এদাবি যত জোরালো হচ্ছে জাতিসংঘের দ্বৈতনীতি প্রকাশ পাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের রেশন কমিয়ে দেয়া, ফিরতে ইচ্ছুকদের রেশন বন্ধ করা রহস্যজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থেকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
টেকনাফ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও হেড মাঝি বজলুর রহমান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিকত্ব অধিকার, বসবাসের বাড়ি ও জমি, সম্পত্তি ফেরত, জীবিকা ও চলাচলের অধিকার, নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৪টি দাবি বাস্তবায়নে লক্ষ্যে ক্যাম্পের ভেতর মানববন্ধন ও র‍্যালী করেছি। আমরা চাই কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যেনো প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ না হয়।আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ১৬ এপিবিএন’র উপ অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) জামাল পাশা বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের ২৩টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা ১৩ পৃথক স্থানে স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সকাল ৯টা হতে নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হতে থাকে রোহিঙ্গারা। সোয়া ১০টার দিকে তারা ব্যানার ও পেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যান। তেমন কোন প্রচারনা না থাকলেও ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সমাগম বেড়ে সমাবেশে পরিণত হয় মানববন্ধন। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুরোনো স্মৃতি উল্লেখ কালে রোহিঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সবার একবাক্যে দাবি গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। এপিবিএনের পাশাপাশি শৃংখলা বাহিনীর অন্য বিভাগও সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করেছে। নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের হত্যা করে আগুনে নিক্ষেপ, গর্ভবতীর পেট কেটে মা-বাচ্চা দুজনকেই হত্যার মতো বর্বরতা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে কি না জানি না। প্রাণ বাঁচাতে অন্যায়ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই মর্যাদায় বার্মায় (মিয়ানমার) ফিরতে চাই।’
error: Content is protected !!