হোম » সারাদেশ » পলিনেট হাউজে ফুল চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সিরাজগঞ্জের কৃষক শহিদুল

পলিনেট হাউজে ফুল চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সিরাজগঞ্জের কৃষক শহিদুল

হুমায়ুন কবির সুমন: পলিনেট হাউসে ফুল চাষ করে সারা ফেলেছেন সিরাজগন্ঞ্জের ফুলচাষী শহিদুল ইসলাম। এ পদ্ধতিতে ফুল চাষে আর্থিকভাবে তিনি সফল হয়েছেন। 
পলিনেট হাউজের মাধ্যমে শীতের ফুল গরমে এবং গরমের ফুল শীতে চাষা করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তিনি। পলিনেট হাউসে ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসল সারা বছরই চাষাবাদ করা হচ্ছে।

জানা যায়, সফল ফুল চাষী শহীদুল ইসলাম সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার পলিনেট হাউসে ফুল চাষ করতে বছরে খরচ হচ্ছে ৫-৬ লাখ টাকা।
আর ফুল বিক্রি করে বছরে তিনি লাভবান হচ্ছেন ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। এবছর শহীদুলের ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই হাউসে গাদা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা ফুলে ছেয়ে গেছে।

বর্তমানে ফুল তুলতে ও বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শহিদুল। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। ফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক। তার দেখা দেখি এ অঞ্চলের আরো অনেক কৃষক পলিনেটে হাউসে ফুল ও সবজি চাষে উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুজন কৃষক কাজ শুরু করেছেন।

সদর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রতনকান্দিতে একটি পলিনেট হাউস নির্মান করা হয়েছে।

এই পলিনেট হাউসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চ মূল্যে যে ফসল ও ফুল রয়েছে তার চাষাবাদ করা।  বিশেষ করে লেটুস, ক্যাপসিকাম, বিভন্ন ফুল চাষাবাদ করা। আবার শীত কালীন ফুল ও ফসল গ্রীস্মকালীন সময়ে চাষ করা যায়।
পলিনেট হাউসে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করা হয়। অনেক সময় শৈত্য প্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টির কারনে উচ্চ মূল্যের ফসল গুলো চাষাবাদ করতে সমস্যা হয়।

কিন্তু পলিনেট হাউসে এই সমস্যা গুলো থাকবে না। আগাম ফসল এখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষক তার ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে। আর্থিক ভাবে কৃষক লাভবান হবে।

সফল ফুল চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, পলিনেট হাউসে চাষাবাদ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে অনেক নিরাপদ থাকা যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে উন্নত মানের টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস, ফুল কপি, বাঁধা কপি চাষাবাদ করতে পারবো।

এতে অনেক ভালোবান হবো। এক সময় ফসল চাষাবাদের পর জমি ফাঁকা থাকতো। তখন কোন কিছু চাষাবাদ করতে পারি নাই।  কিন্তু পলিটেন আসার পর এখন আর জমি পতিত থাকে না। এবছর ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক।

আশা করছি এখান থেকে ভালো মুনাফা পাবো।

তিনি আরও বলেন, আমার পরিনেট হাউসে ফুল ও ফসল চাষাবাদ ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের আরো অনেক কৃষক পলিনেটে হাউসে ফুল ও সবজি চাষে উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুজন কৃষক কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষ লাভজনক। এখানে চাষা বাদ বেড়ে যাবে। বছরে আমাদের ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়। লাভ হয় ৯- থেকে ১০ লাখ টাকা। কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়তই সহযোগিতা করছে এবং নিয়মিত খোাঁজ খবর নিচ্ছেন। সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টাও করে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পতিত প্রবন রায় বলেন, পলিনেট হাউসে ফুল চাষ জেলায় এই প্রথম। পলিনেট হাউসে দীর্ঘমেয়াদী ফুল চাষ করা যায়। শীতের ফুল গরমে এবং গরমের ফুল শীতে চাষাবাদ করা যায়। এটি খুব লাভজনক ব্যবসা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শা দেয়া হয়।

পলিনেট হাউস তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এটি অতিবৃষ্টি এবং গ্রীস্মকালে অনেক সময় ফসলের চারা মরে যায়। তবে পলিনেট হাউজে ১২ মাস যে কোন ফুল যে কোন সবজি চাষাবাদ করতে পারবে কৃষক। এতে কৃষকও খুশি।

স্থানীয় তারেক হোসেন ও শাহিন আলম বলেন, নদী ভাঙ্গন অঞ্চলে পলিনেট হাউজে ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে। এত বড় পলিনেট হাউস আর কোথাও নাই। এর মাধ্যমে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি শহিদুল ইসলামের পলিনেট হাউস দেখে অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার উদ্যেগ নিয়েছে।

এ হাউস দেখার জন্য অনেকেই আসেন। বিভিন্ন রংয়ের ফুল দেখতে খুব ভালো লাগে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আনোয়ার সাদাত বলেন, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় একটি পলিনেট হাউস নির্মান করা হয়েছে। এই পলিনেট হাউসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে
বিভিন্ন উচ্চ মূল্যে যে ফসল ও ফুল রয়েছে তার চাষাবাদ করা।

এই পলিনেট হাউসে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করা হয়। অনেক সময় শৈত্য প্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টির কারনে উচ্চমূল্যের ফসল গুলো চাষাবাদ করতে সমস্যা হয়।
কিন্তু আমাদের এই পলিনেট হাউসে এই সমস্যা গুলো থাকবে না। আগাম ফসল এখানে চাষাবাদ করতে পারি। এর ফলে কৃষক তার ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে। আর্থিক ভাবে কৃষক লাভবান হবে বলে তিনি জানান।
error: Content is protected !!