হোম » সারাদেশ » নানা অনিয়মে চলছে বগুড়ার শেরপুর ছোনকা-চোমরপাথালিয়া সড়কের সংস্কার কাজ

নানা অনিয়মে চলছে বগুড়ার শেরপুর ছোনকা-চোমরপাথালিয়া সড়কের সংস্কার কাজ

এম,এ রাশেদ,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় পুরোনো সড়ক সংস্কারকাজে সিডিউল বহির্ভূত ভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ছোনকা-চমরপাথালিয়া ভায়া ধুনট উপজেলার মথুরাপুর সড়কে। এ সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে। এ নিয়ে অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সরকারের জিওবি মেইন্টেনেজ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি বগুড়া কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বগুড়ার শেরপুরের ছোনকা-চোমরপাথালিয়া ৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহারকারী শেরপুরের ঠিকাদার সুকুমার মোহন্ত এ সংস্কারের কাজ শুরু করেন। এ রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া ব্যবহার করে বালু দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সড়কের পাশে থাকা গাইডওয়ালগুলোও একেবারে নিম্নমানের ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

শেরপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছরের ভোগান্তি পরে উপজেলার ভবানীপুর ও সুঘাট ইউনিয়নের সীমানাবর্তী ছোনকা- চোমরপাথালিয়া পর্যন্ত ৩.৯’শ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য প্রাক্কলিত ব্যায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়। এর প্রেক্ষিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঠিকাদার সুকুমার মোহন্ত গত ২০ জানুয়ারি কাজ শুরু করেন। সংস্কার কাজ শেষ হবে আগামী মে মাসের ১৯ তারিখ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতার বিনিময়ে নিম্নমানের ইট, খোয়া এমনকি পুরান রাস্তায় পিচ কার্পেটিংয়ের অংশ পরিশোধন না করেই সমূদয় মিশিয়ে দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছে বলে সচেতন এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন।

তবে কাজের শুরু থেকেই তদারকি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে এসব অনিয়ম করে চলছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়কের কাজে বাঁধা দেন। তারপর প্রকৌশলী বিভাগকে মৌখিক ভাবে জানিয়েও ফল পায়নি। এরপরও খারাপ ইট দিয়ে রাস্তা তৈরী করে বর্তমানে পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। এহেন কাজ সমাপ্ত হলে ৬মাসও টিকবে না বলে দাবী করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।

১৬ মার্চ বুধবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও সড়কের পাশের গাইড ওয়াল নিম্নমানের(৩নং ও ২নং) ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকেরা বলছেন, ঠিকাদার যে রকম ইট-বালু দিচ্ছেন, তা দিয়েই তাদের রাস্তা নির্মাণ করতে হচ্ছে। এছাড়াও সংস্কার কাজ তদারকিতে কোন কার্য সহকারি(ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট)কে দেখা যায়নি। এ সময় স্থানীয়রা তদারকি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন উচ্চ পর্যায় থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বগুড়ার আওতায় বাস্তবায়িত কাজের তদন্ত করা হোক।

এ বিষয়ে সংশ্লিস্ট ইউপি সদস্য আরিফুর ইসলাম বলেন, ওই ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা সংস্কার শুরু করেছে। এতে এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে এবং শতাধিক এলাকাবাসীর লিখিত স্বাক্ষরের সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্নধার সুকুমার মোহন্ত বলেন, ওই সড়ক সংস্কারে কোন নিম্নমানের ইট-বালু  ব্যবহার করা হচ্ছেনা, তবে যাদের কাছ থেকে এসব সামগ্রী ক্রয় করা হচ্ছে তারা ভুলবশত মাঝে মধ্যে এক নম্বর ইটের মধ্যে কিছু খারাপ ইট দিয়ে থাকতে পারেন। তাছাড়া আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক শিকার।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বলেন, সড়ক সংস্কারে কয়েক জায়গায নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার দেখা গেলেও ঠিকাদারকে ভাল সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং রাস্তাটি পর্যবেক্ষন করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোর্শেদ বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে বর্তমানে কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তদন্ত করে এবং গুনগত মান ঠিক করেই সংস্কার কাজ শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।

error: Content is protected !!