হোম » প্রধান সংবাদ » আমতলীতে ইটভাটায় শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ। পাঁচ দিন আটকে রেখে আলামত নষ্টের চেষ্টা।

আমতলীতে ইটভাটায় শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ। পাঁচ দিন আটকে রেখে আলামত নষ্টের চেষ্টা।

বরগুনা প্রতিনিধি: ইটভাটায় সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যাকে শ্রমিক ইলিয়াস সিকদার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার মা এমন অভিযোগ করেন। ধর্ষণের আলামত নষ্ট ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইটভাটার ম্যানেজার মোঃ মোফাজ্জেল হাওলাদার ও সরদার মোঃ নুর আলম শিশুর বাবা ও মাকে আটকে রেখেছে। পাঁচ দিন পরে সোমবার শিশুটিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার দুপুরে আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের হাজারটাকা বাঁধের ফাইভ স্টার ইটভাটায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানাগেছে, উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার মা-বাবা কুকুয়া ইউনিয়নের হাজারটাকা বাঁধ এলাকায় ফাইভ স্টার ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। ওই একই ইটভাটায় আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের ইসমাইল সিকদারের ছেলে ইলিয়াস সিকদার ইট তৈরির কারিকর হিসেবে কাজ করে। উভয় শ্রমিকরা ভাটায় খুপরি ঘরে বসবাস করেন। গত বুধবার দুপুরে কারিকর ইলিয়াস শিশু কন্যাকে মজা খাওয়ানোর কথা বলে তার ঘরে ডেকে নেয়। ওই ঘরে নিয়ে শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেন শিশু কন্যার মা। শিশুর ডাক চিৎকারে শিশুর মাসহ স্থানীয়রা ছুটে যান। পরে ওই শিশুটিকে ইটভাটার সরদার মোঃ নুর আলম গাজীপুর বন্দরের স্থানীয় চিকিৎসক মোঃ জসিম উদ্দিনের কাছে নিয়ে যান। পল্লী চিকিৎসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,
ইটভাটার সরদার মোঃ নুর আলম শিশু কন্যা গাছ থেকে পড়ে যৌনাঙ্গে ব্যথা পেয়েছে মর্মে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু ওই শিশুর যৌনাঙ্গে ফুলা জখম দেখে চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে বখাটে ইলিয়াস পলাতক রয়েছে। এ ঘটনার খবরে ইটভাটা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এ ঘটনার শাস্তি দাবী করেছেন। এদিকে এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইটভাটার ম্যানেজার মোঃ মোফাম্মেল হাওলাদার ও সরদার মোঃ নুর আলম উঠেপড়ে লেগেছেন। আলামত নষ্ট ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা শিশু কন্যার বাবা ও মাকে ঘটনার পরপর ইটভাটায় আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন শিশুর কন্যার বাবা। পাঁচ দিন পরে ওই শিশুকে নিয়ে তার মা ও
বাবা ইটভাটা থেকে পালিয়ে যায়। সোমবার দুপুরে শিশুটিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের নারী চিকিৎসক মোসাঃ তারান্নুম মাহজাবিন শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করেছেন। অধিকতর পরীক্ষার জন্য শিশুটিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটভাটার শ্রমিক বলেন, ইলিয়াস একজন বখাটে ধরনের ছেলে। শিশুকে মজা খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে শুনেছি। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তাফা হাওলাদার বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় সরদার নুর আলম শালিস ব্যবস্থা করে মিমাংশা করে দেয়ার কথা শুনেছি। তিনি আরো বলেন, শিশুটিকে সরদার নুর আলম গাজীপুর বন্দরে এক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন। শিশু কন্যার মা কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, ইলিয়াস মজা খাওয়ার কতা কইয়্যা মোর সাড়ে তিন বচ্চরের মাইয়্যাডারে ধর্ষণ হরছে। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই।
শিশু কন্যার বাবা বলেন, ধর্ষণের আলমত নষ্ট ও ঘটনা ধামাচাটা দিতে ইটভাটার ম্যানেজার মোফাজ্জেল হাওলাদার ও সরদার মোঃ নুর আলম আমাদের আটকে রেখেছেন। পাঁচদিন পর ওই ইটভাটা থেকে পালিয়ে এসেছি। ইটভাটার সরদার মোঃ নুর আলম শিশুটির বাবা মাকে আটকে রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, শিশুটিকে আমি চিকিৎসা করিয়েছি।  ইটভাটার ম্যানেজার মোঃ মোফাজ্জেল হাওলাদার বখাটে ইলিয়াসের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এমন কোন ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি। তবে লোক মুখে শুনেছি।  ইটভাটার মালিক মোঃ মধু প্যাদা বলেন, এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। সাড়ে তিন বছরের একজন শিশু কন্যার সাথে এমন ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবী করেন তিনি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তারান্নুম মাহজাবিন বলেন, শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অধিকতর পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।  আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, বিষয়টি শুনে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
error: Content is protected !!