হোম » Uncategorized » মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে রাবি শিক্ষকের জালিয়াতি!

মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে রাবি শিক্ষকের জালিয়াতি!

রাবি প্রতিনিধিঃ জাল সনদ দিয়ে মাতৃকালীন ছুটি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানা। এর আগেও জাল সনদ দিয়ে ছুটি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  এদিকে বিভাগের প্লানিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডেকেট সভায় এই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর প্রফেসর ড. গোলাম কবিরকে আহ্বায়ক করে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. রেজিনা লজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ড. সালমা সুলতানা গত ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত মোট ২ বছর ০৬ মাস ০৭ দিন (শিক্ষাছুটি, স্যাবাটিক্যাল ছুটি ও অন্যান্য ধরণের) ছুটি ভোগ করেছেন। এরপর বিভাগীয় প্লানিং কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ০১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ০১ মার্চ ২০১৯ পযর্ন্ত ৩ দফায় প্রফেসর সালমাকে ২ বছর ১ দিন পূর্ণবেতনে শিক্ষাছুটি দেয়া হয়।
বিভাগের প্লানিং কমিটি জানায়, বার বার ড. সালমা ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করলে ছুটির যথার্থতা ও গবেষনার অগ্রগতির বিষয় তার সুপার ভাইজারের নিকট জানতে চাওয়া হয়। তখন তার জার্নাল পেপার সাবমিশনের প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে বলে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু গত ০৫ মার্চ ২০১৯ এবং ০৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে তার সুপারভাইজার জানায় ড. সালমার রিকমান্ডেশন লেটারটি তার লেখা নয়। এবং ২০১৮ সালেই ড. সালমার সাথে তার সুপারভিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।  ড. সালমা কর্তৃক রিকমান্ডেশন লেটার দুটি ভুয়া দাবি করেন তিনি।
এদিকে ড. সালমার প্রসবজনিত সনদের বিষয়টি যাছাইয়ের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিসিয়াল মেইল থেকে সনদটির ছবিসহ একটি মেইল করা হয় সনদে সাক্ষরকারী ডাক্তার ডেল এর কাছে।
প্রতিউত্তরে ডাক্তার ডেল মেইল করে বলেন, ‘এই সাক্ষর ও সনদটি আমার কিন্তু সালমা সুলতানা আমার কাছে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করেনি’।
ছুটি নিয়ে জালিয়াতি করায় তার ছুটির জন্য সমস্ত সুপারিশ বন্ধ করে দেয় বিভাগীয় প্লানিং কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শিক্ষক সালমার আর কোন শিক্ষা ছুটি পাওনা না থাকায় স্বপদে বিভাগে যোগদানের জন্য গত ২০ মে ২০১৯ তারিখে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রাপক না থাকায় স্থায়ী ঠিকানা থেকে চিঠি ফেরত আসে আর অস্থায়ী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা থেকে ঐ চিঠির জবাব দপ্তরে আসেনি।
আর তাই গত ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯২তম সিন্ডিকেট সভার ৬৩ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক পত্র ইস্যুর তারিখ হতে দু‘মাসের মধ্যে স্বপদে বিভাগের যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয় শিক্ষক সালমাকে। নির্ধারিত সময় ০১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের মধ্যে স্বপদে যোগদানে ব্যর্থ হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অবসিত (টারমিনেট) হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সালমা সুলতানা শিক্ষা ছুটি নেন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, উনি লন্ডনে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের গ্রীণকার্ড বা নাগরীকত্ব পেয়েছেন যেটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পযর্ন্ত অবগত নয়।
জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, বিভাগের কাছে ড. সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চাইলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিয়েছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখার দায়িত্ব এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল আলিম বলেন, ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. সালমা সুলতানা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বাইরে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করেছেন। উনার যোগদানপত্রটি এখনো গৃহীত হয়নি।
এবিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, আমাকে এবিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনেছি। আমি এখনও চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিষয়টি নিয়ে আগাবো।
এ বিষয়ে প্রফেসর সালমা সুলতানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জাল সনদে দিয়ে মাতৃকালীন ছুটি নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন কথা বলবেন না বলে নিজ থেকে ফোন কেটে দেন।
error: Content is protected !!