হোম » প্রযুক্তি » দেশে প্রথম পরিবেশ বান্ধবভাবে সিলিকা উৎপাদন হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে

দেশে প্রথম পরিবেশ বান্ধবভাবে সিলিকা উৎপাদন হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও কুষিতে স্বনির্ভর হলেও পিছিয়ে রয়েছে শিল্পায়নে। চিনি কলের পরে এখানে তেমন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় শিল্পায়নে আজও অনুন্নত ও পিছিয়ে পরা জেলা গুলির মধ্যে একটি। তবে সম্প্রতি দেশের প্রথম পরিবেশ বান্ধব সিলিকা উৎপাদন হওয়ায় এখানকার শিল্পায়ন ও অর্থনিতিতে আমল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।
সিলিকা বা সিলিকন ডাই অক্সাইড, যা সাদা সোনা নামেই বেশি পরিচিত। আর দেশের মাটিতে পরিবেশ বান্ধব ভাবে এ সাদা সোনা প্রথম উৎপাদিত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছিট চিলারং গ্রামে সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড অ্যাগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সিল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই সিলিকা উৎপাদনের কাজ করছে।
সিলিকা বা সাদা সোনা তৈরীর এ পুরো প্রক্রিয়ায় কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ধানের তুষ বা ভুষি।ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করার পরে আমরা একটি বর্জ্য পেয়ে থাকি। যে বর্জ্যটির নাম হল তুষ। জানা যায়, তুষকে পুরিয়ে ছাই করলে ৬০-৭০ ভাগ সিলিকা পাওয়া যায়। এটি কষ্টিক ডাইজেশন করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরী করে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা যায়।
প্রথমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধানের তুষের ছাই মেপে ডাইজেস্টরে নিয়ে কষ্টিক সোডা দিয়ে ডাইজেসন (অনবরত নাড়ান) করা হয়। ডাইজেশন প্রক্রিয়াটি ১০০-১৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১-২ ঘণ্টা চালানো হয়। এখান থেকে যে ধোঁয়াটি বের হয় সেটি বাইরে ছেড়ে না দিয়ে সেটা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্নকৃত বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে বাইরে থেকে কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন পরেনা। এরপর তরল সোডিয়াম সিলিকেট ২-৩ মাইক্রন ছাকনি দ্বারা ছাকা হয়। এতে বিশুদ্ধ তরল সোডিয়াম সিলিকেট পাওয়া যায়। চাহিদা অনুযায়ী সোডিয়াম সিলিকেটে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য পানি বাষ্পীভূত করা হয়। এরপর এই বিশুদ্ধ সোডিয়াম সিলিকেট ২৫০ লিটার স্টিল এর ড্রামে ভরে বাজারজাত করা হয়। ছাকনি হতে প্রাপ্ত বর্জ্য পদার্থ এক্টিভেটেড কার্বন ড্রাইয়ার এর মাধ্যমে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়।
প্রসাধনি সাবান, সিরামিক কোডিং ও কাচামাল, কাগজ, পেপার বোর্ড, পানি পরিশোধন, ভবন নিমার্ণ, গার্মেন্টস, পেট্রোলিয়াম এবং মেটাল তৈরীতেও কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে এ সিলিকা। বর্তমানে বাংলাদেশে বাৎসরিক ভাবে সোডিয়াম সিলিকেটের বার্ষিক চাহিদা আনুমানিক ২হাজার মেট্রিক ট্রন পেরিয়েছে। তবে শিল্প কলকারখানার চাহিদার সাথে দিন দিন বাড়ছে সিলিকার চাহিদা।
দেশে বিপুল পরিমাণে সোডিয়াম সিলিকেট (সিলিকা) তৈরির কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সোডিয়াম সিলিকেট আমদানি করার জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। দেশের মাটিতে সিলিকা তৈরীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৫৫-৬০ ভাগ সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী মানিক হোসেন বলেন, আমরা ধানের তুষ দিয়ে সিলিকা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। যে প্রক্রিয়া সম্পুর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি প্লান্টের মধ্যে এটি একটি। আমাদের পুরো প্রক্রিয়াটি শতভাগ পরিবেশবান্ধব। আমরা আশা করছি এটির মাধ্যমে আমরা দেশের যে সিলিকার চাহিদা তা মেটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হব।
সাসটেইনেবল এনার্জি এন্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সিল) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ইডকলের আর্থিক সহযোগিতায় আমাদের এ প্রজেক্ট। আমরা এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৫০০ কেজি সিলিকন পার অক্সাইড পাউডার তৈরী করছি। যেহেতু এটি দেশে উৎপাদন হতোনা এবং আমদানি করতে হত তাই এর চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। আমরাই প্রথম দেশে এটি তৈরী করছি । আমরা ধীরে ধীরে এর প্রোডাকশন আরো বৃদ্ধি করব।
error: Content is protected !!