হোম » অন্যান্য বিভাগ » দৌলতপুরে পরপর ছয়টি খুনে জনমনে আতঙ্ক

দৌলতপুরে পরপর ছয়টি খুনে জনমনে আতঙ্ক

জাহিদ হাসান: কুষ্টিয়া দৌলতপুরে হত্যাকাণ্ড যেনো নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। গত ছয় দিনে দৌলতপুরে ছয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে দৌলতপুরের আকাশ বাতাস। প্রশাসনের নজরদারি ও তৎপরতা বাড়লেও স্বস্তি মিলছে না জনমনে। উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিন যাপন করছে দৌলতপুরবাসীর।
গত মঙ্গলবার (২রা মে) সকাল ১০টার দিকে দৌলতপুরের হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর শাহাপুর গ্রামে প্রকাশ্যে খুন হন জাকির মোল্লা (৪৫)। পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের ১৩টি মামলা ছিলো।
অভিযোগ ছিলো একই এলাকার আবু মন্ডলের কৃষি জমি জবর দখল করে রাখার। এবার ওই জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন জাকির মোল্লা। মঙ্গলবার সকালে জাকির মোল্লা ওই ক্ষেতে গেলে আবু মন্ডলের লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাকে। এ ঘটনায় জাকির মন্ডলের লোকজন প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিস দল ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই দিন সন্ধ্যায় দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মন্ডলের ছেলে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত সোমবার (২৪শে এপ্রিল) উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সে একই এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে।
ওইদিন ভোরে প্রতিবন্ধী নুর সালামকে কে বা কারা গলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে রবিবার (৩০শে এপ্রিল) দিবাগত রাতে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
চিলমারীর চরে রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার খা পক্ষ আর মন্ডল পক্ষের মধ্যে প্রায় দুইমাস ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। বিরোধের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (২৭শে এপ্রিল) বিকেলে উভয় পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় তারা পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।
হামলায় ৬ জন আগুনে পুড়ে দগ্ধসহ ১৬ জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুরে চিলমারী উত্তরপাড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন গেদার ছেলে আক্তার মন্ডল (৩৭) ও মৃত নবীর মন্ডলের ছেলে দিনু মন্ডল (৭০) মারা যান।
এদিনে এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ফারুক মণ্ডল (২২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ঠা মে) সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখনও মুমূর্ষু অবস্থায় লাইফ সার্পোটে রয়েছেন আরো ২ জন। আগুনে ইকবাল মন্ডল, মোজাম্মেল মন্ডল, জহুরুল মন্ডল ও রানা মন্ডলের বাড়ি পুড়ে ভষ্মীভূত করা হয়। এসময় হামলকারীরা ওইসব বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায় এবং কেটে ফেলে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ।
খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনায় মন্ডল পক্ষের মোজাম্মেল মন্ডল বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় হত্যার চেষ্টা ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধারায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
মামলার সূত্র ধরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ও র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের অভিযানিক দল গত শুক্রবার (২৮শে এপ্রিল) রাতে চিলমারীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আসামিরা জামিনে ছাড়া পেলে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এসব হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে যে সকল ব্যক্তি নিহত ও লাশ উদ্ধার হয়েছে এসকল ঘটনায় দৌলতপুর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে।
আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে। বাকী আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকা গুলোর পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
error: Content is protected !!