হোম » অন্যান্য বিভাগ » হোয়াটসঅ্যাপের কলরেকর্ড সম্পর্কে তথ্য

হোয়াটসঅ্যাপের কলরেকর্ড সম্পর্কে তথ্য

আওয়াজ অনলাইন: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ।  আমরা জানি হোয়াটসঅ্যাপে কল রেকর্ড করা যায়না, আর এর জন্যই হোয়াটসঅ্যাপ দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
অ্যান্ড টু অ্যান্ড এনক্রিপশন’ হোয়াটসঅ্যাপকে সবচেয়ে নিরাপদ ও জনপ্রিয়  মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে গড়ে তুলেছে বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু বিগত দশকজুড়ে একাধিকবার বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপের কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি যেমন হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ড মিলেছে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের। কিন্তু সর্বজন স্বীকৃত বিষয় হলো হোয়াটসঅ্যাপে কল রেকর্ড করা যায় না। তাহলে এই কল কীভাবে রেকর্ড হচ্ছে? আর তা ফাঁসই বা হচ্ছে কীভাবে?
নানা প্রয়োজনে কল রেকর্ডের প্রয়োজন হয় এমন ধারণা থেকেই সব মোবাইলে সাধারণ কল রেকর্ডের সুবিধা রয়েছে। যদি অ্যান্ড্রয়েড ৮-এর পর থেকে প্রতিটি ভার্সনে কল রেকর্ড অপশন চালু করতে হলে একটি ভয়েস অটো চলে যায় অপর প্রান্তে আর তা হলো- ‘ইওর কল হ্যাজ বিন রেকর্ডিং’ অর্থাৎ আপনার কলটি রেকর্ড হচ্ছে। এর মাধ্যমে উভয় প্রান্তের মানুষ জানতে পারেন যে কল রেকর্ড হচ্ছে। অবশ্য কিছু অ্যাপস ব্যবহার করে এই ভয়েসটি বন্ধ রাখা যায়।

কিন্তু নিরাপত্তার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মেটা স্বীকৃত অ্যাপে কল রেকর্ডের কোনো সুবিধা নেই। আর এ কারণেই হোয়াটসঅ্যাপের কল রেকর্ডের জন্য ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি বেশ কিছু ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়-
ম্যানুয়ালি কল রেকর্ড 
এ ক্ষেত্রে ফোন কল এলে বা কল করা হলে রিসিভ হওয়ার আগেই অন্য একটি ফোন থেকে রেকর্ড অপশন চালু করে দিতে হবে এবং লাউড স্পিকার দিয়ে রেকর্ড করা যাবে কথোপকথন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ কল রেকর্ড রাখতে না চাইলে একটু সচেতন হলেই তা সম্ভব হবে। এভাবে কল রেকর্ডের জন্য ফোনে লাউড স্পিকার চালু করতে হয়, এ সময় সাধারণ ফোন কলের তুলনায় অনেক বেশি বাড়তি আওয়াজ পাওয়া যায় অপর প্রান্তে। এ ছাড়াও ছোটখাটো নাড়াচাড়া বা কাগজ সরিয়ে রাখার শব্দ হলেও তা স্পষ্ট শোনা যায় অপর প্রান্তে। ফলে বোঝা যায়, লাউড স্পিকারে দিয়ে কথা বলা হচ্ছে এবং এই কথাগুলো চাইলে রেকর্ড করতে পারে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি অথবা লাউডে দিয়ে কাউকে শোনাতে পারে। এভাবে কল রেকর্ড উভয়ের সম্মতিতে হলে এটি সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা। কেননা এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ না চাইলে সরাসরি ফোনের অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম হ্যাক করা ছাড়া কল রেকর্ড উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিষয়টির বাড়তি নিরাপত্তা দেয়, কোন মোবাইলে কলটি রেকর্ড করা হয়েছে হ্যাকাররা সেটি আইডেন্টিফাই করতে না পারলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা মোবাইল সেট দুটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও লাভ হবে না।
সফটওয়্যার/অ্যাপস ব্যবহারে কল রেকর্ড 
সাধারণত আইওএস এবং নিরাপদ হিসেবে পূর্ণ সমর্থন না পেলেও গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে কিছু অ্যাপস, যা ব্যবহার করে আপনি কল রেকর্ড করতে পারেন। কিন্তু অগ্রিম বলে রাখা উচিত, এই অ্যাপসগুলো চাইলেই আপনার তথ্য চুরি করতে পারে এবং অন্যত্র বিক্রি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের অ্যাপস ব্যবহারের কারণে আপনার অজান্তেই কল রেকর্ড চলে যেতে পারে অন্য কারও হাতে। তারপরও মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ডের জন্য ব্যবহার করছে এমন বেশ কিছু অ্যাপস।
স্মার্টফোনের নিজস্ব কল রেকর্ড ব্যবস্থা : বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু স্মার্টফোনের নিজস্ব কল রেকর্ডের সুবিধা রয়েছে। যেমন-ওয়ানপ্লাস ফোন ও স্যামসাং। যদিও স্যামসাংয়ের সব মোবাইল সেট থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ড করা যায় না। তবে ওয়ানপ্লাস ফোনে অনায়াসে সেটিং সেকশনে গিয়ে কল রেকর্ডিংয়ের অপশন পাওয়া যাবে। যদি সবকটি কল ম্যানুয়ালি রেকর্ড না করতে চান তাহলে অটো রেকর্ড অপশনে গিয়ে অন করে রাখলে সব কল স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হতে থাকবে। স্যামসাংয়ের স্মার্ট ফোনেও সেটিং সেকশনে গিয়ে কল রেকর্ডের অপশন পেয়ে যাবেন। এ ছাড়াও বর্তমানে দেশের বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনে এই অপশন রয়েছে। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, এটি গুগল স্বীকৃত কল রেকর্ড পদ্ধতি নয় এবং আইফোন থেকে এভাবে কল রেকর্ডের কোনো ব্যবস্থা নেই।

কিউব কল : এটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া থার্ডপার্টি অ্যাপস। তাদের প্রাইভেসি সেটিংসে বলা হয়েছে, তাদের এই সার্ভিস ব্যবহার করে কল রেকর্ড করা হলে সেই কলে তারা বা অন্য কেউ একসেস করে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই অ্যাপস ব্যবহারের জন্য তাকে আপনার স্টোরেজের ডাটা আদান-প্রদানের অনুমতি প্রদান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তারা চাইলে আপনার কল রেকর্ডসহ স্টোরেজে থাকা অন্যান্য তথ্য একসেস করতে পারে।
অন্যান্য কল রেকর্ডিং অ্যাপ : গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সার্চ করলে ভিডিও কল রেকর্ডার ফর ভিডিও কলস, ভয়েস রেকর্ডার প্রো, কল রেকর্ডার, অটোমেটিক কল রেকর্ডারসহ আরও বেশ কিছু অ্যাপস পাওয়া যাবে। কিন্তু এগুলোর নিরাপত্তা ফিচার কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়াও এই অ্যাপসগুলোর বিভিন্ন সময় কাজ করে না হোয়াটসঅ্যাপে, ফলে ফোন রিসিভ করার সময় হ্যাং হয়ে যায় এবং আরও বিরক্তিকর নোটিফিকেশনও দেয়।
ক্র্যাক হোয়াটসঅ্যাপ ভার্সন : হোয়াটসঅ্যাপের কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুলস এটি। কেননা এটি গুগল প্লে স্টোরে নয়, বরং ওপেন সোর্স থেকে ডাউনলোড করে নিতে হয়। এটি হোয়াটসঅ্যাপের অনিরাপদ একটি এপিকে বা ক্র্যাক ভার্সন। এটি মেটা স্বীকৃত অ্যাপস নয়। এখানে হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও, অডিও থেকে শুরু করে সবকিছুই রেকর্ড করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কল রেকর্ড ফাঁসের পাশাপাশি সম্ভাবনা থাকে আপনার মোবাইলে থাকা ব্যক্তিগত সব তথ্য ভিন্ন হাতে চলে যাওয়ার।
আইফোনে হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ড : সবচেয়ে নিরাপদ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে পরিচিত আইফোনের আইওএস। আইফোনে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপের কল রেকর্ড করার ম্যানুয়াল উপায় ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে লাউড স্পিকার অন না করে আইফোনের কল রেকর্ড করতে চাইলে তাকে কানেক্ট করতে হবে ম্যাক পিসির সঙ্গে। এরপর সেখানে ‘ট্রাস্ট দিস কম্পিউটার’ অপশন সিলেক্ট করে কুইক টাইম অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে হবে ম্যাক ডিভাইসে। সেখানে ফাইল অপশন ওপেন করে ‘নিউ অডিও রেকর্ডিং’ অপশনে যেতে হবে। এখান থেকে ‘আইফোন’ অপশন বাছাই করে রেকর্ড বাটন চাপতে হবে। এবার আইফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে অথবা অন্য যেকোনো মোবাইল অ্যাপস থেকে কল কর সেখানে ‘এড ইউজার’ আইকোন বাছাই করতে হবে কল রিসিভ হলে। কথা শেষ হলে কুইক টাইম থেকে ফাইলটি ম্যাক ডিভাইসে সেভ করে নিতে হবে।
তবে জেনে রাখা ভালো কোনো যোগাযোগ মাধ্যমই সর্বোচ্চ সিকিউর নয়। কারণ এর নিয়ন্ত্রণকারি প্রতিষ্ঠান তাদের বৃহৎ স্বার্থ হয়ত কল রেকর্ড ফাঁস করে না কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোনো বিধি-নিষেধে তারা তথ্য দিতে প্রস্তুত থাকে। এটা ব্যবসায়ীক নীতিমালার একটা অংশও বটে।
error: Content is protected !!