হোম » মতামত » করোনাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা

করোনাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা

 জুলফিকার বকুলঃ করোনা মহামারীর এই দুর্যোগ পূর্ণ সময়ে বিশ্বগতি অনেকটাই থেমে গেছে।দেশ – বিদেশের বিভিন্ন সেক্টরগুলোতে কম- বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।দেশে দীর্ঘ দিন যাবৎ স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে।নির্ধারিত পরীক্ষার সময়ও পার হয়ে গেছে বিভিন্ন স্তরে।অভিভাবকরা দিন দিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। শিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীই পাঠোভ্যাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

অনেক অভিভাবকদের কাছেই শোনা গেছে যে তাদের ছেলে -মেয়েরা বাসায় পড়তে চায় না। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব,স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদির কারণে ঘরের বাইরে বের হতে না পারায় শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ বাড়ছে।এই সমস্যা শুধু আমাদের নয় বিশ্বব্যাপী। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আর আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য আছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ শিক্ষা, সংস্কৃতি তথা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও আমরা ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সহিত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। জাতিকে সুশিক্ষায় গড়ে তোলা যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি জননিরাপত্তা দেওয়াটাও অতিব জরুরি। তাই সরকার এখন উভয় সংকটে।একটি সন্তান শিক্ষা অর্জন করে মেধাবী হয়ে দেশের সম্পদে পরিনত হবে এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

কিন্তু আগে তো তাকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে।এই জটিল সমীকরণের সমাধান দেয়া কি শুধু সরকারেরই দায়িত্ব? শিক্ষক, অভিভাবক,শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী গত কয়দিন পূর্বেই একটি বক্তৃতায় বলেছেন,শিক্ষা শুধু পরীক্ষা কেন্দ্রিক হলে চলবে না।শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা অর্জন, সুনাগরিক তথা বিশ্ব নাগরিক হওয়া।মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এর উক্তি গুলো যদি আমাদের নিউরণকে অনুরণিত করে তবে শিক্ষক – শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পারস্পরিক যোগসূত্র স্থাপন করে ঘরে বসেও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। অভিভাবক নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ করবে তার সন্তান সঠিক সময়ে পূর্বের মত নিয়মিত পড়ার টেবিলে বসে কিনা।

দীর্ঘ সময় ধরে ঘরে আছে শিক্ষার্থীরা এটা মাথায় রেখে তাদের মানসিক প্রেসার না দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে তাদেরকে পড়ালেখায় প্রেরণা যোগানো,প্রয়োজনে নিজেই সম্ভব হলে তার সাথে পড়তে বসা, ছোট খাটো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাকে পাঠ্যবইয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করা,শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেয়া,অনলাইন ক্লাসগুলো করার ব্যবস্থা করা।বিটিভি পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে, অনলাইনে শিক্ষক বাতায়ন সহ বিভিন্ন ব্যক্তি আইডিতেও এখন বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন পাঠদান ভিডিও জ্ঞান মূলক, বিশ্লেষণমূলক ইত্যাদি পোস্ট সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী আপলোড করছেন।

এগুলো সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীকে আনন্দের সহিত দেখার আগ্রহ সৃষ্টিতে সাহায্য করে আপনি হতে পারেন একজন যত্নশীল,দায়িত্বশীল বাবা-মা।গ্রামে দেখেছি গৃহপালিত প্রাণীর যত্ন করতে অভিভাবকরা মরিয়া। কিন্তু নিজের সন্তানের প্রতি খেয়াল একটু কম।আবার এটাও দেখেছি যে, অক্ষরজ্ঞানহীন একজন অভিভাবক তার সন্তানের পড়ালেখার বিষয়ে কতটা সোচ্চার। এই ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীর পাশে একান্ত আপন হয়ে থাকাটা একজন শিক্ষকের জন্য অনস্বীকার্য। নিয়মিত মনিটরিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করে পাঠোভ্যাস ধরে রাখাটা একজন শিক্ষক এর গুরুদায়িত্ব।

শিক্ষার্থী – অভিভাবক সহ সমাজের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে,স্বাস্থ্য বিধি মেনে,মোবাইল, ইন্টারনেট এর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা একজন শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এই দায়িত্বকে অস্বীকার করতে পারিনা।প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, একজন শিক্ষক তার বাস্তব ও কাল্পনিক চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের ভিতরের ঘুমন্ত চিন্তাশক্তিকে বের করে আনবেন।ফলে শিক্ষার্থী গবেষণা নির্ভর শিক্ষাদানের মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ পাবে।তাই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা নির্ভর না হয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরী।তাকে মনে রাখতে হবে নিয়মিত অধ্যয়ণই তার একমাত্র কাজ।আর এই ফলপ্রসু অধ্যয়ণ এর জন্য অভিভাবক, শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসেও মেধাবী শিক্ষার্থী হয়ে গড়ে উঠা সম্ভব। তাছাড়া এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়তো খুব শিগগিরই কেটে যাবে এমন প্রত্যাশা করছি।সর্বোপরি, আমরা স্ব- স্ব দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করি।সরকারকে সহায়তা করি।শিক্ষাক্ষেত্রে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই সেই দিকটা বিবেচনায় এনে উন্নত জাতি ও উন্নত দেশ গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

লেখকঃ জুলফিকার বকুল

শিক্ষক, ঢাকা ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল,ডুয়েট ক্যাম্পাস,গাজীপুর

error: Content is protected !!