হোম » জাতীয় » যে কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন

যে কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন

আওয়াজ অনলাইন : ভোটের ৫২ দিন আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে এবারের নির্বাচনে আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপিও। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও তাদের জোট মিত্রদের অনেকের অবস্থান এখনো বিপরীত মেরুতে। তারা তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থানে দাঁড়িয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে কি না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হবে কি না কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বৃহৎ স্বার্থে পুনঃতফসিল বা ভোটের তারিখ পেছানো হতে পারে কি না- এসব নিয়েই এখন চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে।চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসলেও তাতে সাড়া মেলেনি বিএনপির। দলটির নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে সংসদ বিলুপ্ত এবং ইসি পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা এবং বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ দাবির পক্ষে সরব। কিন্তু বিএনপি যদি ভোটে অংশগ্রহণ করে তবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে পুনঃতফসিল তথা নির্বাচনও পেছানো হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সংকট উত্তরণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হতে পারে সংলাপ। যদিও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে এখন বলছেন, তফসিল হয়ে গেছে। এখন আর সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তফসিল হলেও বৃহৎ স্বার্থে সংলাপের সেই সুযোগ যে একেবারেই নেই তেমনটিও বলা হচ্ছে বেশ স্পষ্টভাবেই। আবার কিছুক্ষেত্রে এমনটিও বলা হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আলোচনা চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাইরে সেটির কোনো আভাস বুঝতে পারছে না মানুষ।

সব মিলিয়ে নির্বাচনের সময় যত ঘনাচ্ছে, রাজনৈতিক আশু পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশাও তত ঘনীভূত হচ্ছে। ফলে হরতাল-অবরোধ দিয়ে দাবি আদায় আদৌ সম্ভব কি না বা বৃহৎ জনসমর্থিত রাজপথের প্রধান বিরোধীশক্তিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ভোট করলে সেটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কতটা ইতিবাচক সমর্থন পাবে, এ বিষয়গুলোও এখন রাজনীতির মাঠে আলোচনায় অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ একটা জিনিস চায়- সেটা হলো ভোটের সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং নিজের ভোট নিজে দেওয়ার নিশ্চয়তা।

বিরোধীদের বক্তব্য, সরকার একতরফাভাবে নির্বাচন করলে দেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিকভাবে এরকম নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যও করা যাবে না। ফলে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে তারা লাগাতার হরতাল-অবরোধ নিয়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ প্রতিহতের কর্মসূচি ছেড়ে নির্বাচন সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। তবে, বিএনপির মতো বড় দলবিহীন নির্বাচন একতরফা হবে কি না বা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, এমন প্রশ্নের মধ্যেও ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। গত শনিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ১০টি দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের কথা বললেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়েছে।

গতকাল বুধবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় পার্টি (জাপা) ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই দিনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোটের সঙ্গ ছেড়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের জোট অন্তত ১০০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে। অন্যদিকে বুধবার পর্যন্ত তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩৫০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৭২ জন।

Loading

error: Content is protected !!