হোম » সাহিত্য » সাহিত্যের চোখ: নারায়ণগন্ঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে ভ্রাম্যমান পতিতা

সাহিত্যের চোখ: নারায়ণগন্ঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে ভ্রাম্যমান পতিতা

***নিষিদ্ধ নারী***
মোঃ শামীম রেজা
বেশ কিছুদিন আগে প্রিয়ার সাথে
ঘুরেছি শীতলক্ষ্যার পাড়ে।
শীতলক্ষ্যার ঘাটে সেদিনই
এক অপরূপার রূপে মুগ্ধ আমি
এমন সৌন্দর্য কখনো দেখিনি
নিবিড় কালো চুল, মেঘ ধারণ করা
গভীর সকরুণ দুটো টানা চোখ মমতাময়।
গোলাপি ঠোঁটে লাগা স্নিগ্ধতা রূপ রহস্য।
সৌন্দর্য উপভোগে স্থির আমি,
দৃষ্টি যেন লক্ষ্যভেদী,
চোখের পলকে অপলক চেয়ে থাকা
এ কি দেখছি আমি?
মানুষ, হুর, দেবী, কে ইনি, আমাকে বিমোহিত করে
আপন মনে চলেছে এলোচুলে?
সন্মোহিতের মত পা দুটো এগিয়ে চলে,
অজানা সফরে।
সাজিভরা ফুলের পসরা
সে পবিত্র পূজারিণী।
মনে ওঠা প্রশ্নের ঝড়,
হুরের ও কি সিংহাসনে বসা হুর বা দেবী থাকে?
যাকে ফুল চন্দনে সাজাবার প্রয়োজন হয়।
কৌতুহলের জমাটি তখন।
জানতে হবে কোন হুর বা দেবী সে
কতখানি সৌভাগ্য তার,
শ্রেষ্ঠ রূপসী যার পূজা উপাচার।
আমি এগোতেই
হঠাৎ মানুষের মৌচাক এগোয়
যেন ঢিল খাওয়া মৌমাছির দল ।
দেবী অবিচল অভ্যস্ততায়, চোখে উপেক্ষা
তখনো পেছন ছাড়েনি দেহ মন।
প্রিয়ার সাবধান বাণী কানে তখন
এত চোখ থাকতে ও চোখে নজর,
নিজেকে কি ডোবাবে নাকি তবে?
অনিয়ম ভালোবাসার মন, চরম অবুঝ তখন,
সোজা কথাই দুরূহ বিস্তর।
উদাসীনতা ভুলে আমারি চোখে চোখ রাখে।
নিজের কপালে সৌভাগ্যরেখা অনুভব করি
প্রিয়ার কথা অগ্রাহ্য করি,
নিঃশ্বাসের কাছাকাছি হই,
কে তুমি,
তোমাকে জানতে ইচ্ছে করে।
কেন তোমার ছোঁয়ায় ওদের দুর্গন্ধ লাগে?
জবান তার যেন অভিজ্ঞতার বাণী।
আমি নিষিদ্ধ পল্লীর নিষেধ সীমান্তে
তোমাকে যেন অভিশপ্ত হতে না হয় কখনো
আন্তরিক স্পর্শে কোমলতার শিরারা জেগে ওঠে।
বলি একবার নামাজের অাহবান করবো তোমায়?
তারপর জানতে চাইবো কি করে এলে এ ঠিকানায় ।
স্বর্গের পথ কি ভুলেছিলে সেবার?
সব শুনে বিদায় নিয়ে ফিরে আসি
আসতেই হয় অন্য সমাজের নিয়ম আমার।
ভেতরে প্রচন্ড জ্বালা, বুকের ভেতর বিষাদ
সব মিলে আমি এক অন্য মানুষ
ইচ্ছে, পৃথিবীকে ধরি হাতের মুঠোয়
দুমড়ে মুচড়ে টুকরো করি,
প্রিয়ার বিদ্রূপ বাণী, ছুঁয়ে এলে?
আমি ক্ষ্যাপা ঝড় তুলি
রক্ত মাংসের মানুষে এত ভয়?
কোথায় ছিলে সেদিন যেদিন পল্লী নিষিদ্ধ হলো
নিষ্পাপ মুখের সুখী নীড় ভাঙ্গলো চক্রান্তকারী
মুমূর্ষু পিতার আত্মার রক্ষার্থে হয়ে গেল বিকিকিনি।
পবিত্র মোম কাঁপতে কাঁপতে গলে গেল রূপালী চমকে,
কাঁদলো যন্ত্রণায়।
কোথায় ছিল ফুলঝুরি?
সাহায্যের হাত গুটিয়ে ছিলে শামুকের মত,
আজ ঘৃণা দেখাবে তুমি?
আমি অসহ্য জ্বালা নিয়ে
আর তো কখনো মাথা ঠেকানো যাবে না
শীতলক্ষ্যায়।
পাবো না সুখতৃপ্তি কোমল ছোঁয়ায় ।
আজও রোজ শীতলক্ষ্যার পাড়ে মাজারের খাদেম হাঁক ছাড়ে। অারো চলে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরে পূজা অর্চনা।
মেলে না মাজারের তবারক
মেলে না দেবী দর্পণ
অপরূপা হুর,
ভুলেছে আমাকে আমারই জন্যে
চোখে মুক্তো রেখে।
আমারই ভোলা হয়নি তাকে,
রিল্যাক্স সময় বেশ কিছুদিন ধরে,
তাই অাজ আবার ঘুরতে বের হয়েছি আনমনে।
প্রিয়া এখন রাজশাহীতে।
সেই সুযোগে আবার শীতলক্ষার পাড়ে।
খোঁজ করি—-
দেখেছ আমার সেই ঘরপোড়া বোনটা কে
এ পথে আসতে যেতে?
শুনতে কি পাও, তোমাদের পায়েল,
নুপুরের সুর এখনো,
আমার যে তাকে বড়ো দেখতে ইচ্ছে করে
আরো একবার তার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে
ইচ্ছে করে,
বলতে ইচ্ছে করে আমরা দোষী
দোষটুকু শুধু তোমার ঘরে।
error: Content is protected !!