হোম » প্রধান সংবাদ » সিরাজগঞ্জ-১ আসন: আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি মাঠে নেই!

সিরাজগঞ্জ-১ আসন: আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি মাঠে নেই!

হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ থেকে : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো প্রায় চার মাস বাকি। নির্বাচনী এলাকায় বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। বর্ষায় যমুনা নদীর উত্তাল ঢেউ যেমন ছুটে চলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে, তেমনি যমুনা পাড়ের সিরাজগঞ্জের অন্যতম একটি উপজেলা কাজিপুর।
এই উপজেলা একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর জন্মভূমি কাজিপুর। সেই সুবাদে যমুনা নদীবেষ্টিত ভাঙনকবলিত এই এলাকাটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। গুরুত্বপূর্ণ কাজিপুর উপজেলা ও সদরের আংশিক নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসন। এই আসনের রাজনীতিতে শহিদ মনসুর আলী পরিবারের নামই বারবার ফিরে আসে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পর তার পুত্র নাসিম ১৯৮৬ সালে তৃতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন প্রায় সব দল বর্জন করে। আর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলেও ওই আসনটি আওয়ামী লীগ মনোনীত নাসিমের দখলেই থেকে যায়।
এর পর ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিতর্কিত নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে। একই বছর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে ফের নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পাশাপাশি তিনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনটিতেও বিজয়ী হন। পরে অবশ্য তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি ছেড়ে দেন। তখন সেখানে উপনির্বাচন দিলে তার ভাই ড. সেলিম জয়লাভ করেন। সেবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
এর পর ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসে বিএনপি। কিন্তু সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি নাসিমের দখলেই থেকে যায়। আর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম অংশ নিতে না পারায় তার পুত্র তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। যদিও নাসিমপুত্র জয় ২০১৪ সালের ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বাবাকে ফের আসনটি ছেড়ে দেন। সেই নির্বাচনে নাসিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। আর সর্বশেষ একাদশ নির্বাচনেও আসনটিতে জয়লাভ করেন মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু নাসিমের মৃত্যুর পর ফের তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় উপনির্বাচনে জিতে সংসদে আসেন।
বর্তমানে এই আসনটিতে বিএনপির তেমন কোনো কর্মকাণ্ড এবং জোরালো দলীয় কর্মসূচিও নেই। বিএনপির যারা নেতৃত্ব দেন তাদের বেশির ভাগই থাকেন কাজিপুরের বাইরে। সব মিলিয়ে আসনটির দখল এবারও আওয়ামী লীগের এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারটির হাতেই থাকবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এবারও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান নাসিমপুত্র বর্তমান সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। জয় ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়ন পেতে তার চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রয়াত সদস্য ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন মাঠে রয়েছেন।
বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন এই আসনে।
তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, কাজিপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম রেজা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সেক্রেটারী মাও. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কাজিপুর থানার সভাপতি মাও. জাফর আহমদ।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নৌকাকে ফের বিজয়ী করতে তৃণমূলকে করছেন সংগঠিত। আওয়ামীলীগের দাবী উন্নয়নের চিত্র দেখে টানা চতুর্থবারের মতো জনগন শেখ হাসিনাকেই ফের ক্ষমতায় বসাবে। অন্যদিকে বিএনপি নির্দলীয় তত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না এবং নির্বাচন করতে দিবে না শ্লোগান নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নেমেছে।
উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬২৭ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৩ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন একজন।
error: Content is protected !!