হোম » সারাদেশ » কিশোরগঞ্জের পানান বিলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাছ ধরার হাইত উৎসব 

কিশোরগঞ্জের পানান বিলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাছ ধরার হাইত উৎসব 

শাহজাহান সাজু,কিশোরগঞ্জ: ভোরের আলো তখনও ফোটেনি।কারও হাতে পলো, কারও হাতে জাল।আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিলের ধারে জড়ো হন হাজারো মানুষ।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত (হাইত) উৎসবে মেতে ওঠেন মৎস প্রেমীরা।মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেল গোবিন্দপুর ইউনিয়নের পানান বিলে হয় মাছ ধরার এ উৎসব।
বহুদিন আগ থেকেই খালবিলে ‘হাইত’ উৎসব হলেও প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ দিনদিন কমতে থাকে।অবৈধ দখলে এ ধরনের উৎসব আর এখন দেখা যায় না।তবে দখল-দূষণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ কমে যাওয়ায় এ উৎসবেও ভাটা পড়েছে।প্রতি বছরের মত পানান বিলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।এ উৎসবে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মতো জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন।মাছ ধরার উৎসবের খবর আগেই মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।জেলার সদর ,তাড়ইল, করিমগঞ্জ, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী ও ময়মনসিংহের নান্দাইলসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ ধরতে হাজারো মানুষ জড়ো হন।থেমে থেমে হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন তারা। অক্টোবরের শুরুতেই অতি বৃষ্টিতে আশপাশের বিভিন্ন পুকুর থেকে বিলে ভেসে আসে মাছ।
এতে স্থানীয়রা বিলে হাইত উৎসব করার পরিকল্পনা নেন।বোয়াল, আইড়, রুই, কাতলা, শোলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে এই বিলে।গোবিন্দপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, এই বিলে এত মানুষকে একসঙ্গে মাছ ধরতে আগে কখনও দেখিনি।চারদিকে যেন উৎসব।ছোট বোয়াল মাছে পোনা সহ দেশীয় মাছ ধরা পড়েছে।উপজেলার পুমদী গ্রামের ফারুক মিয়া বলেন, বোয়ালের পোনা, রুইসহ আমরা ৪ জন আনুমানিক সাত/আট কেজির মত মাছ ধরেছি।তবে আশানুরূপ মাছ পায়নি।কচুরিপানা বেশি থাকায় মাছ ধরতে সমস্যা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কাঞ্চন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আমার বাপ-দাদারা মাছ ধরতো এই বিলে।এই পানান বিলের ঐতিহ্য রয়েছে জেলা জুড়ে।অনেক দিন পর মানুষ আবার মাছ ধরার উৎসবে মেতেছেন দেখে ভালো লাগছে।তবে এবার তেমন মাছ পাওয়া যায়নি যা হতাশ করেছে সবাইকে।একটু বৃষ্টি হলেই অনেকেই কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা মাছ মেরে ফেলে যার ফলে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নানান গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক খোকা জানান, এই পানান বিল জেলার একটি ঐতিহ্য।প্রতিবছরেই এই হাইত উৎসব করে বিলের চারপাশের এলাকার লোকজন।গ্রামবাসী বসে একটি দিন নির্দিষ্ট করে মাছ ধরতে যায়।এই দিনটি মোবাইলের মাধ্যমে একে একে সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ে। বিগত বছরগুলির মত এবার উল্লেখযোগ্য মাছ পাওয়া যায়নি।আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এই বিলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
error: Content is protected !!