হোম » প্রধান সংবাদ » করতোয়া নদীতে পলো দিয়ে মৎস্য শিকার

করতোয়া নদীতে পলো দিয়ে মৎস্য শিকার

রায়হান আলীঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় করতোয়া নদীতে পলো উৎসবে মেতেছে মাছ শিকারীরা। সি,এন,জি অটোরিকশা করে দলে দলে এসে জমতে শুরু করে করতোয়া নদীতে। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয় আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলোথ।

শুষ্ক মৌসুমে গ্রাম বাংলায় খাল-বিলে পানি কমে গেলে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আশ্রয় নেয় জলাশয়ের তলদেশের আগাছাপূর্ণ স্থানে। তখন কম পানিতে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা সহজ। তাই এই দিনগুলোতো পলো শিকারীরা নদ-নদী খাল বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার করে থাকেন। আর পলো নিয়ে দলে দলে একসঙ্গে খালে-বিলে বা নদীতে মাছ ধরাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় পলো বাওয়া, বাউত উৎসব বা পলো উৎসব। সবাই একত্রে হয়ে নদীতে নেমে আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচা সদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই চিরচেনা প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো উৎসব’।

শনিবার ( ২০ মার্চ) সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার করতোয়া নদীতে এ উৎসবে মাতেন শত শত মাছ শিকারিরা। একসঙ্গে দল বেধে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে পলো দিয়ে মাছ ধরেন তারা। আর এস সব পলোতে আটকা পরে দেশী বোয়াল, শোল, রুই, কাতলা সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ।

এই পলো উৎসবে অংশ নিতে ছুটে আসেন দূরদূরান্ত থেকে অনেক মাছ শিকারীরা এর মধ্যে ভাংগুড়া,চারমোহর,শাহজাদপুর,উল্লাপাড়া সহ আশেপাশে এলাকার শতশত মানুষ।

পলো উৎসবে আশা শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের লোকমান হাকিম (৬০) জানান,আগের মতো আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করা চোখে পড়ে না। আমি বিগত ২০ বছর ধরে এই পলো দিয়ে মাছ শিকার করি। কিন্তুু বর্তমানে পলো উৎসব তেমন আর হয় না। তাছাড়াও হাট-বাজারে আর মেলে না পলো। তবে আগের মতন আর এগুলোর চাহিদা নেই। দিন দিন পলোর ব্যবহার কমছে। আর ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পলো ও পলো উৎসব।

পাবনার জেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের রাজ্জাক বিশ্বাস (৭০) জানান, বিগত ৩০ বছর যাবত তিনি এই পলো দিয়ে মাছ শিকারে জড়িত। এক সময় গ্রাম বাংলার বিভিন্ন জায়গা পলো দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন আর পলোর বহুল প্রচলন দেখা যায় না। হারিয়ে গেছে মাছ ধরার বিশেষ যন্ত্রটি। বাঁশ দিয়ে সহজে বাড়িতে পলো তৈরি করে অনেকে জীবিকাও নির্বাহ করেন। বিলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে আসায় ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। এটি মাছ ধরার কোনো প্রতিযোগিতা নয়, একসঙ্গে আনন্দ উৎসবই মুখ্য বিষয়। মাছ না পেলেও অনেকেই শখের বসে অংশ নেন পলো নিয়ে। কিন্তু মাছখেকো সোঁতিজাল ওয়ালা প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পলো উৎসবের আগে সব মাছই সোঁতি জালে ধরে ফেলেন প্রভাবশালীরা। তাই পলো বাওয়া হলেও মাছ পাওয়া যায় না। সরকারিভাবে বিল সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়া হলে গ্রামীণ ঐতিহ্যটি এক সময় হারিয়ে যাবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই পলো উৎসব এখন তেমন একটা আর চোখে পড়ে না।তবে পলো দিয়ে মাছ ধরাটা গ্রামের একটি পরিচিত দৃশ্য। এ অঞ্চলের মানুষ গ্রামীণ সংস্কৃতিতে যুগের পর যুগ ধরে লোকজ এ সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন।

error: Content is protected !!