হোম » প্রধান সংবাদ » অনলাইন ক্লাসে কমছে উপস্থিতি ক্যাম্পাসে ফিরতে চায় রাবি শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ক্লাসে কমছে উপস্থিতি ক্যাম্পাসে ফিরতে চায় রাবি শিক্ষার্থীরা

আবু সাঈদ সজল, রাবি: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ ই মার্চ থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস প্রাথমিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে গত ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাসের পর মাস চলছে করোনার আক্রমণ কোন ভাবেই কমছে না বরং পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বন্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে মাঝে মধ্যে ক্যাম্পাস খোলার আভাস পাওয়া গেলেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং দফায় দফায় ছুটি বেড়ে সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঠেকেছে।
এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করে বাড়ছে হতাশা। অন্যদিকে অনলাইন ক্লাসেও ক্রমাগত কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। সরাসরি ক্লাসে যুক্ত হতে চায় শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবরে ক্যাম্পাস খোলার দাবি উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় খুুলে দেয়ার। বিশেষজ্ঞরাও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথমের দিকে বিভাগভেদে এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশের ওপরে থাকলেও দিন যাওয়ার সাথে সাথে উপস্থিতির পরিমাণ কমে ২৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। দিনকে দিন ক্রমাগত কমছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি।
অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ কম থাকার বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে তাদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অনেক গাফিলতি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে অনেক শিক্ষক আছেন যারা হঠাৎ করেই দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তাছাড়ার সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে পড়াটাকে আনন্দের সঙ্গে করার সুযোগ থাকলেও ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে সেটির সুযোগ নেই। কিছু কিছু কোর্স হাতেকলমে শেখার। ফলে সেসব কোর্সে অনলাইনে ক্লাস করে কিছুই বোঝেন না তারা। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে।
তারা বলছেন,  দীর্ঘদিন বাড়িতে বন্দিজীবনে থেকে সেশনজটের আশংকায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। সরাসরি ক্লাসে উপস্থিতির বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তারা।  তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি- সরকারী ঘোষনা এলেই তারা ক্যাম্পাসে খুলে দেবেন। এবং চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারী থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ  সেশনজটের আশংকা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বক্কর বলেন, আমাদের অধিকাংশেরই বাড়ি গ্রামাঞ্চলে। গ্রামে ইন্টারনেট গতি ততটা বেশি না। যে কারণে ক্লাসের কথা ভালো বোঝা যায় না। আমাদের গণিত ও পরিসংখান কোর্স আছে। এই কোর্সগুলো অনলাইনে বোঝা অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই যদি ক্যাম্পাস খুলে দেয় তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। বাংলা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ বলেন, এর আগে কখনও অনলাইনে ক্লাস করা হয় নি। আর আমাদের ক্লাসও নিয়মিত হয় না। শিক্ষকেরা হঠাৎ করে বলে দেয় আজকে ক্লাস আছে। তাই অনেক সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া পক্ষে মত দিয়ে বলেন, আমিও চাই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। কিন্তু করোনার ব্যাপকতায় তারা আবার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদেরও এরকম হতে পারে। আর কিছুদিনের মধ্যে হয়তো করোনার ভ্যাক্সিন চলে আসবে আবার শীতও চলে যাবে। তাই আমার মনে হয় ফেব্রুয়ারী-মার্চের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই বেশি ভালো হবে।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে শীতের প্রকপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় আমরা চাই না শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে। তাই পরিস্থিতি অনুকূলে এলে কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলতেও রাবি কর্তৃপক্ষের আপত্তি নেই। এটা সরকারী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেন তিনি।

Loading

error: Content is protected !!