হোম » প্রধান সংবাদ » নবীনগরে প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতায় অনিয়ম, দালাল চক্রের অপ-তৎপরতা

নবীনগরে প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতায় অনিয়ম, দালাল চক্রের অপ-তৎপরতা

সোহেল মিয়া, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার এবার বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে অসাধু দালালচক্রের যোগসাজশে প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতায় অনিয়ম এর তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের বেশ কয়টি প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই একটি দালালচক্র কতিপয় ব্যক্তিদের ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ৩/৪ হাজার টাকা করে জনপ্রতি হাতিয়ে নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে এই চক্রটি ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডেও এমন কান্ড করতে পারে।

মাঠ পর্যায়ে তথ্য নিয়ে জানা যায়,বড়িকান্দি ইউনিয়নের ০২ নং ওর্য়াডের মুক্তারামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আসকর আলী নামক একব্যক্তি নিজেকে নবীনগর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাথে ভাল সম্পর্ক আছে বলে প্রচার করে প্রতারণা করে গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় মানুষদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে এই টাকা। এই ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বহুবার উঠেছে কিন্তু বরাবরই সে পার পেয়ে যাওয়ায় এই বার ২৬ জনকে প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।

এরই মধ্যে সরেজমিনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম থাকা জোসনা বেগম ইতিমধ্যে সরকারের দেয়া জমি আছে ঘর নেই প্রকল্প থেকে ঘরও পেয়েছেন। অথচ তার স্বামী একজন স্বচ্চল ইলেকট্রেশিয়ান। তিনি জানান আমি বিধবা ভাতায় নাম দিয়েছি আমার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করে আলাদা থাকে। তার নাম কে যুক্ত করলো এমন প্রশ্নের জবাবে সে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। আরেক প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া সুস্থ মহিলা সেলিনা বেগম বলেন,প্রতিবন্ধী ভাতায় আমার নাম এসেছে।

কার মাধ্যমে জমা দিয়েছেন প্রশ্ন করলে দালালের নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন,আমি নিজেও জানিনা আমার নাম কি করে তালিকায় আসছে, আমি ঢাকা থেকে এসে দেখি আমার নাম প্রতিবন্ধী ভাতা তালিকায় রয়েছে। এলাকায় ধ্রæ মজাল সৃষ্টি হওয়া সুস্থ ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা আর স্বামী থাকা সত্বেও বিধবা ভাতা কিভাবে পায় সে সম্পর্কে জানতে দালাল চক্রের মূলহোতা আসকর আলীকে তার মুঠোফোনে বার বার ফোন করে না পেয়ে তার বাড়িতে গেলে সেখানেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে মঙ্গলবার সকালে ভাতার কার্ড নিয়ে আসা তালিকা বহির্ভূত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখলে সন্দেহবশত স্থানীয় ইউ/পি সদস্যের তোপের মুখে পরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মী মোঃ পাবেল। এই সম্পর্কে বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ০২ নং ওর্য়াড সদস্য মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন,আমি শুধু আমার ওর্য়াড থেকে ১১ জনের ভাতার কার্ড পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমাকে অবগত না করে বাকীরা কি করে তালিকায় নাম উঠিয়েছে এই বিষয়ে আমি নিজেও জানি না।

তাছাড়া আমাকে বাদ দিয়ে যদি যে কেউ তাদের নাম ভাতার তালিকায় উঠাতে পারে তবে যাচাই বাচাইয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কি দরকার, আমি তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথের কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি। তালিকায় কি করে এদের নাম আসল এই প্রশ্নের উত্তরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মী মোঃ পাবেল বলেন,আমি শুনেছি ৯ জনের নামে অভিযোগ উঠেছে যে,তারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য না এই ৯ জনের কাউকে ভাতা দেয়া হবে না যতক্ষণ না তারা মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাচাইয়ে টিকবে।

কিন্তু কি করে তাদের নাম তালিকায় আসল এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুত জানান, প্রতিবার সরকারি ভাবে বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের তালিকা তৈরি করে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে বলার পরই একশ্রেণীর অসাধু দালালচক্র অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের যোগসাজশে এই অপতৎপরতা শুরু করেন।

তারা মাননীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর নাম ভাঙিয়ে কিছু ব্যক্তিদের সেখানে তারা আমাদের মতামত ছাড়াই সম্পৃক্ত করে দেয়। এবং ভাতা প্রদানের সময় ঐ দালালচক্র সেখানে উপস্থিত থাকেন। আমি এসব ঘৃণিত দালাল ও অসাধু কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ পারভেজ আহমেদ বলেন,আমার কাছে ৯ জনের নামে একটি বেনামে একটি অভিযোগ এসেছে যদিও অফিসিয়ালি অভিযোগকারীর নাম ছাড়া ব্যবস্থা নেয়া যায় না তারপরও বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব,আমি সাফ জানিয়ে দিতে চাই আমার কর্তব্যরত এলাকায় কোন ধরনের দালালকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না।

Loading

error: Content is protected !!