হোম » আইন-আদালত » হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও ২ ছাত্র হত্যার ঘটনায় হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি চার্জশীট দাখিল

হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও ২ ছাত্র হত্যার ঘটনায় হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি চার্জশীট দাখিল

দিনাজপুর প্রতিনিধি:  দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)তে সংঘর্ষ ও ২ ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি চার্জশীট দাখিল করেছে সিআইডি।

১৪৭/১৪৮/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪২৭ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উৎপাদনাবলী আইনের ৩/৪ ধারায় দুটি চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। তবে চার্জশীট দুটি গ্রহণের বিষয়ে এখনো শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি।
গত ২৬ জুলাই দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতের-১ (সদর)-এই চার্জশীট দুটি দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই ফয়সাল আমীন।

দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ৩ দিন আগে আমি চার্জশীটের কপি হাতে পেয়েছি।

চার্জশীটে বিচারার্থে সোপর্দকৃত অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলা শহরের নিমনগর বালুবাড়ী এলাকার ইসরাফিল শাহর ছেলে ইফতেখারুল ইসলাম রিয়েল (৩০), ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও বগুড়া গাবতলী থানার তেলীহাটি পচানিপাড়া এলাকার শরৎ চন্দ্র রায়ের ছেলে অরুন কান্তি রায় সিটন (৩০), ছাত্রলীগ নেতা ও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার জোত সাতনালা গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান রানা (২৬), গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য মিরুপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে এসএম জাহিদ হাসান (২৪), দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ পলাশবাড়ী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম আজম সিফাত (২২), রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে আহসান হাবীব শাওন (২৩), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কৈচরপাড়া এলাকার জাহিদ আলীর ছেলে গোলাম রাব্বী ডলার (২২), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পূর্ব মাতাপুর এলাকার আজিজুল হকের ছেলে রিয়াজুল হক সাধন (২৪), বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার লতিফপুর উত্তরপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খলিল আকন্দর ছেলে খালিদ সাইফুল্লাহ আমিনুল মিল্লাত (২৪), নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী উপজেলার পিএম সাইফুল আলমের ছেলে মনিরুল হাসান সুমন (২০), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখইর নওদাপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে লিয়াকত হোসেন নয়ন (২০), নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে সামিউল ইসলাম নাঈম (২৬), নওগাঁর রানীনগর উপজেলার আত্তাইকুলা দক্ষিণপাড়া এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে এসএম আহসান হাবীব ওরফে রিজভী হাবীব (২৫) ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার শান্তিনগর এলাকার অভয় দেবনাথের ছেলে বিজন কুমার দেবনাথ (২৬)।
চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে, অত্র মামলার সূত্রপাত ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রুহুল আমীন কর্তৃক ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটনকে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর বহিস্কার করার বিষয়ে এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ছাত্রলীগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এ সময় আন্দোলন দমানোর জন্য ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত কিছু সদস্য ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের সুবিধা ভোগের জন্য একটি নতুন দল সৃষ্টি করে এবং ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারী আন্দোলনকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারপিট করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ছাত্রলীগের সদস্যরা তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্য পুনরুদ্ধারের জন্য ক্যাম্পাসে আক্রমনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে নবীন বরন অনুষ্ঠান চলাকালে তারা হামলা চালায়। এ সময় তারা ককটেল বিস্ফোরন, পিস্তল থেকে গুলিবর্ষন করে ও লাঠি, সামুরাই ও রড দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমন করে যাতে অনেকেই আহত হয়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলে হামলা করে ভাংচুর চালায় এবং শিক্ষার্থীদের মারধোর ও ইট-পাটকেল ছুড়ে আহত করে। এ সময় ছাত্রলীগের অন্য একটি দল সেখানে গিয়ে ধাওয়া করলে হামলাকারীদের অনেকেই শেখ রাসেল হলের বিভিন্ন তলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত হয়। পরে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে কয়েকজন আসামীকে গুরুত্বর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাদেরকে হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। তাদের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনকে মৃত ঘোষণা করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ককটেল সদৃশ্য বস্তু, ছোট-বড় ৮টি সামুরাই, ৪টি লোহার রড, ১২টি বাশের লাঠি ও গাছের ডাল আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এটিএম শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই ফয়সাল আমীন জানান, মামলাটি তদন্ত শেষে আমি আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছি।
উল্লেখ্য, মারামারি ও হত্যার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছরেও মামলার কোন কুলকিনারা না হওয়ায় গত বছরের মার্চে মামলাগুলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত করা হয়।

error: Content is protected !!