হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » শ্রীপুরে অবৈধ মাটি কাটার হিড়িক

শ্রীপুরে অবৈধ মাটি কাটার হিড়িক

আশরাফুল ইসলাম: গাজীপুরের শ্রীপুরে বিভিন্ন নদ নদী সরকারি খাল বনবিভাগের জায়গা সরকারি ১নং খাস খতিয়ান সহ কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে গেছে। আর চড়া দামে সেই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে নিচু জমি ভরাটসহ ইটভাটা গুলোতে।
দেখা যায় কোনো কোনো যায়গায় প্রকাশ্যে আবার গোপনে রাতের আঁধারে পরিবেশ আইন অমান্য করে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকগুলোতে বোঝাই করা হচ্ছে।
প্রতিটি জায়গা থেকে মাটি পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্তত পক্ষে ৫-৬ টি করে ড্রাম ট্রাক। এতে পরিবেশ ও উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক গুলো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্রমেই উপজেলা ব্যাপী গড়ে উঠা মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অবৈধ ভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে তারা নানা কৌশলে।
 মাটির ট্রাক গুলো উপজেলার প্রত্যেকটি অঞ্চল দাপিয়ে বোড়াচ্ছে। প্রতিনিয়তই ইটভাটার মাটির ট্রাকের চাপায় প্রাণ যাচ্ছে পথচারি শিশু কিশোর স্কুল শিক্ষার্থীর।
পরিবেশ ও নদী রক্ষা কমিটিসহ নানা সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠন নদ নদী সরকারি খালের মাটি কাটা ও বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ আজো মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
 সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গোসিংগা বাজারের দক্ষিণ পাশে নদীর পাড়ের জমি থেকে এস্ককেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় আবুল হোসেন।এদিকে কর্নপুর, পটকা,পেলাইদ,তেলিহাটি ইউনিয়নের মুরগীর বাজার,তালতলী, উত্তর পেলাইদ, সাইটালিয়া,মাওনা ইউনিয়নের শিমলা পাড়া,সিংগারদিঘী, শিরিশগুঁড়ি,ভেরামতলী,বদনী ভাঙ্গা,আক্তাপাড়া, গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা,শৈলাট,কাওরাইদ ইউনিয়নের বলদী ঘাট, সোনাব,শিমুলতলা,বিধাই এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া উজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে বিভিন্ন ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটার মালিকরা দালালের মাধ্যমে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি ক্রয় করে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ৭/১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমিই ডোবায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিমত, প্রতি বছর শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।
এলাকাবাসী জানায়, গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নির্মাণের দুই-এক বছরের মধ্যে তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ শাহান সাহাবুদ্দিন বলেন,  পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা কাটা, নদী থেকে বালু উত্তোলন, বনের বৃক্ষ কর্তন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অথচ আইন অমান্য করে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞের উৎসবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে বালু, নদী ও বন দস্যুদের।
এর ফলে অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও জনপদের। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি  জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদারকি না করায় এমনটি হচ্ছে। তাদের ঘুম ভাঙা জরুরি। কঠোর হওয়া জরুরি। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকা জরুরি। এসবে ব্যর্থ হলে বা পরিবেশ বিনষ্টকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও স্বাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে যথা যথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
error: Content is protected !!