মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাংলাতে একটি কথা আছে আনন্দের জন্য পড়া শুধু গাদা গাদা বই মুখস্ত করার চাপ না দিয়ে আনন্দ নিয়ে পড়া এমন ভিন্ন শিখন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার একটি স্কুল জিলবুনিয়া কামলা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২০ কি.মি. দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থান করেও ভিন্ন শিখন কৌশল প্রয়োগ করে শুধু উপজেলায় নয় জেলায়ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে জিলবুনিয়া কামলা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বাড়ি গিয়ে নয় আনন্দ আয়োজনে পড়ালেখা চলছে শ্রেণি কক্ষেই। উপস্থিতিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে এটি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি জেলার এক আদর্শ প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে।
বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ, চিত্র, দেয়াল লিখন, ইত্যাদি দিয়ে শিক্ষার্থীদের খুব সহজেই পড়াশোনা, নৈতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি মনমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে শিশুদের মনোজগতে শেখার আগ্রহ বা কৌতুহল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এ স্কুলটি। পুরো স্কুলটিই যেন এক বিশেষ লাইব্রেরির প্রতিচ্ছবি। স্কুলের প্রতি পরতে পরতে শিক্ষা।
রোল মডেল স্বীকৃত এই বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল। এই বিদ্যালয়ের অবস্থা ছিল শোচনীয়। ফলাফল বিপর্যয়ের ফলে কয়েক বছর আটকে থাকে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি। ২০০৯ সালে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নিজ মেধা, সৃজনশীলতা, আর নেতৃত্ব দিয়ে এমন উচ্চতায় নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়দের সহযোগিতায় বদলে গেছে বিদ্যালয়ের পরিবেশ, ফলাফল আর নিয়ম-নীতি।
রোল মডেল হয়ে ওঠা পুরো বিদ্যালয়টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ বিদ্যালয়ে শিশুদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে দোলনা, সরাৎ, ঢেকিকল, প্রাণী জাদুঘর, ফুলের বাগান, দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা, সবজি বাগান সহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী। রয়েছে বিদ্যালয়ের নাম অংকিত পাথরের ফলক, শহীদ মিনার, বিভিন্ন মানচিত্র, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, কার্যকর মহানুভবতার দেয়াল। সমস্ত বিদ্যালয় জুড়ে বিভিন্ন মনীষীদের ছবি আর দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে শিক্ষানীয় বিভিন্ন বাণী। আছে শেখ রাসেল স্মৃতি কম্পিউটার ডিজিটাল ল্যাব, শেখ রাসেল কর্ণার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার। বিদ্যালয়ের ছাদে আকর্ষণীয় বৃক্ষের সমাহার। আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের একুইরিয়াম। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে তাদের ক্যাম্পাস ও বাগান।
স্কুলটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী হুমায়রা জানায়, এ স্কুলে যত্ন করে পড়াশোনা করানো হয়, আদর করে মা’ ‘বাবা’ বলে শিক্ষার্থীদের ডেকে থাকেন শিক্ষকেরা। ওই শিক্ষার্থী আরও জানায় স্কুলটি যে কত ভালো লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। স্কুলের নীতিবাক্য গুলো দেখে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে একটি ভালো মানসিকতা তৈরী হচ্ছে বলে জানান জনৈক অভিভাবক। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন জানায়, সে আগে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। গ্রামে এনে এক স্কুলে তাকে ভর্তি করা হবে- এমন কথা শুনে তার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে ভাবছিল শহরের পরিবেশ আর গ্রামের লেখাপড়া এক হবে। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে এসে তার ধারণা পাল্টে যায়।
সহকারী শিক্ষক উম্মে কুলসুম জানান, আমি এর আগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু এ বিদ্যালয়ের মতো এমন সুন্দর পরিবেশ দেখিনি। স্কুলের বাহ্যিক পরিবেশ, শিক্ষা উপকরণ, প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনিরুল ইসলাম স্যারের নেতৃত্ব-কৌশল ব্যতিক্রম। অভিভাবক, তানিয়া খাতুন জানান, এটি শুধু একটি স্কুলই নয় এটাকে শিশুপার্ক এবং বিভিন্ন যাদুঘর মনে হয়। আমার ছেলে বন্ধের দিনগুলোতেও স্কুলে আসতে চায়।
বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম জানান, সদিচ্ছা থাকলে একজন প্রধান শিক্ষক একটা এলাকার পরিবর্তন আনতে পারেন। এটি জেলায় এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক রোল মডেল অর্থাৎ অনুকরণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ এমন পরিবেশ সব বিদ্যালয়ে নিশ্চিত করা গেলে পাল্টে যাবে শিক্ষার পরিবেশ। ছোটবেলায় শিশুরা নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ করে বড় হয়ে তারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন
গাইবান্ধায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষ : ২ চালকসহ আহত ১০
মুসলিমদের ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
বগুড়া গাবতলীতে প্রিসাইডিং অফিসারসহ গ্রেফতার দুই