হোম » সারাদেশ » নির্বাচনের নৌকার পক্ষে কাজ করায়- যুবকের ঘর গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে

নির্বাচনের নৌকার পক্ষে কাজ করায়- যুবকের ঘর গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী কক্সবাজার: একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়ে প্রায় সমালোচনার শিরোনাম হয়ে থাকছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে জয় পাওয়া চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। এক বয়োবৃদ্ধকে অমানবিক ভাবে প্রহারের মামলায় গেল ১৬ মে আদালতে মুছলেকা দিয়ে জামিনে আসেন তিনি। এ বিতর্কের দেড় সপ্তাহের মাথায় এবার আবদুর রহিম নামে এক যুবকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে। নৌকার পক্ষে এলাকায় ভোট করায় নৃশংসভাবে তার ঘর ভাঙ্গা হয়েছে। এর ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১ জুন) কক্সবাজার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী এবং ইউপি সদস্য মো. শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে তাদের সহযোগী হিসেবে ৩০-৪০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী আব্দুর রহিম (মামলা নং-৬০৫/২৩)। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চ্যঙ্গা মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে। আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
ইমরুল কায়েস হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর ছেলে এবং মো. শাহজাহান হলদিয়াপালংয়ের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও স্থানীয় মৃত আব্দুল জলিল সওদাগরের ছেলে।
মামলার বাদীর দাবি, গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট করায় তার উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন চালিয়ে আসছিল চেয়ারম্যান ইমরুল। সর্বশেষ গেল ২৯’মে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য শাহাজাহানের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে বাড়িঘর ভাংচুর এবং প্রায় ৫০ লাখ টাকার ফলজ ও বনজ গাছপালা কেটে ফেলে। এসময় পুকুরের মাছও লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও মামলা নেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (১জুন) আদালতে মামলা দায়ের করেছি। ভিকটিম আবদুর রহিম হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব মরিচ্যার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাজী আব্দুল খালেকের ছেলে।
তিনি আরো বলেন, ২৯’মে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে হঠাৎ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর নেতৃত্বে ইউপি সদস্য শাহ জাহানসহ ৩০/৪০ জন দুর্বৃত্ত আমার বাড়িতে এসে আমার স্ত্রী সন্তানদের টেনেহেঁচড়ে বের করে টিনশেড বাড়ি ব্যাপক ভাংচুর করে। আমি বারবার নিষেধ করলে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে আমার উপরও হামলা চালায়। এতে আমি ও আমার স্ত্রী আহত হন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ সকল সচিত্র তথ্য উপাত্য দেখিয়েছি। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে। আগামী ধার্য্য দিনের আগে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এরআগে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক রুমখাঁ আলী পাড়ার মৃত আলী আহমদের ছেলে সোলতান আহমদকে নির্মম মারধর করেন চেয়ারম্যান ইমরুল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গেল ১৬’মে মুছলেকা দিয়ে জামিন পান চেয়ারম্যান ইমরুল।
ভূক্তভোগী জসিম আহমদ নামে আরেক যুবক জানিয়েছেন, নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে একটি কেন্দ্র স্থগিত রেখে কৌশলে জয় পাবার পর থেকে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী নৌকার পক্ষে ভোট করা লোকজনকে দেখে দেখে নির্যাতন চালাচ্ছে। পুরো ইউনিয়নে এখন তার রাম-রাজত্ব চলছে। তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ব্যবসায়ীরা। তার মনপুত না হলে নাগরিক সুবিধাও দেননা চেয়ারম্যান।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, দাবিকৃত ভিকটিমের পরিবার বিএনপি করে- তারা কেন নৌকার জন্য কাজ করবে? এর বিরুদ্ধে কবরস্থানের জমি দখলের অভিযোগ ছিল, সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমীন, শাহ আলমসহ স্থানীয়রা তাকে দখল উচ্ছেদ করেছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। গত ২৯ তারিখের ঘটনায় আমি ছিলাম না-জানিনাও। মামলাটি আদালত পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে, অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
error: Content is protected !!