হোম » সারাদেশ » সোনারগাঁয়ে দলিল লিখক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে ৪৭ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

সোনারগাঁয়ে দলিল লিখক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে ৪৭ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

মোঃ কবির হোসেন, (সোনারগাঁ) নারায়ণগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। তিনটি দলিলে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ থেকে জানা যায়। সোনারগাঁ সাব রেজিষ্টি অফিসে অডিট করতে এসে তার এ অনিময় ধরা পড়ে।
পরে অডিট কর্মকর্তারা সভাপতিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অডিট অধিদপ্তররের অডিট এন্ড একাউন্স অফিসার, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা পরিদর্শক, জেলা রেজিষ্টার ও সোনারগাঁ সাব রেজিষ্টারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকিরা হলেন, সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার, সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের নিবন্ধন সহকারী আছিয়া আক্তার, লিপি আক্তার ও কেরানী নাসিমা আক্তার। তাদের যোগসাজসে এ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ পত্রে তাদের এ ৫ জনকে অপসারনের সুপারিশ করে অডিট কর্মকর্তারা।
এর আগেও  দলিল লিখক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিকবার শ্রেণী পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার আ.ন.ম বজলুর রহমান মন্ডল। এদিকে খলিলুর রহমান তার সভাপতি পদের প্রভাবে ভাতিজা জাকির হোসেন মামুন ভূয়া শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট তৈরি করে দলিল লিখক সনদ নিয়ে এ পেশা শুরু করায় তার সনদ বাতিল করে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় খলিলুর রহমান ও তার ভাতিজা মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে ওই মামলা চলমান রয়েছে। এ মামলায় খলিলুর রহমান জামিনের রয়েছেন।
জানা যায়, সোনারগাঁ সাব রেজিষ্টি অফিসের দলিল লিখক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান হাতুরাপাড়া মৌজায় ৬৭২৮/২১ নং দলিলে ৬ শতাংশ ছনখোলার জমির স্থলে শ্রেণী পরিবর্তন করে ডেবা দেখিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়াও কাঁচপুর মৌজায় ১৩৯৬ দলিলে সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ি সিএস মৌজায় নগর কাঁচপুর উল্লেখ করে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৫ টাকা ও সিংলাব মৌজায় ৩৮৭৭ নং দলিলে সাড়ে ২৪ শতাংশ নাল জমি শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটি জমির দেখিয়ে ২৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
এ কাজে সহযোগিতা করেছেন সোনারগাঁ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার, তার দুই বোন নিবন্ধন সহকারী আছিয়া আক্তার, লিপি আক্তার ও কেরানী নাসিমা আক্তার। এর আগেও তার বিরুদ্ধে আনন্দবাজার মৌজায় প্রায় ৭টি দলিলে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দলিল লিখক সমিতির পদ ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন খলিললুর রহমান। দলিল লিখক সমিতির সভাপতি হওয়ার হওয়ার তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলেন না বলে জানিয়েছেন না প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লিখক। মুখ খুললেই দলিল লিখকদের সে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে গ্রাহকরা যা কাগজপত্র দেন সেগুলো দিয়ে আমার দলিল প্রস্তুত করি। কাগজপত্র সাব রেজিষ্ট্রার দেখে রেজিষ্ট্রি করে থাকেন।
সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক সমিতির  সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার বলেন, শ্রেণী পরিবর্তন বা রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কেউ আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার ও আমার দুই বোনের নাম অর্ন্তভূক্ত করেছে।
সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব রেজিষ্ট্রার আ.ন.ম বজলুর রহমান মন্ডল বলেন,  আমার যোগদানের আগের ঘটনা। ইতোমধ্যে দলিল লিখক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি লিখিত দেবেন। তাহলে এটি শেষ হয়ে যাবে। তিনি তো সভাপতি সবই বুঝেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার মো. জিয়াউল হক বলেন, এ ঘটনায় রূপগঞ্জের সাব রেজিষ্ট্রারের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
error: Content is protected !!