ভাগ্যবান
রাওয়েল পুষ্প (বাঁশদ্রোণী, কলকাতা)
এই মহামারীর সময় ওরা সবাই নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে হাঁটা পথে পারি দিয়েছিল। শহরে নানা রকম কাজের সাথে যুক্ত শ্রমিকরা নিজেদের খরচ রেখে মোটা টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারত। কিন্তু এই মহামারীতে তার মতো অনেক শ্রমিকের কাজ চলে গেছে। যদিও কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা , গুরুদ্বারের লঙ্গরখানা থেকে সহযোগিতা আসছিল। সকলের বাড়ি ফেরা দেখে তারও বাড়ি ফেরার প্রবল ইচ্ছা জাগল। রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার ছবি অনর্গল টি ভিতে দেখাচ্ছিল, অনেককে আবার পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।
পরমেশরা বেশ কিছুদিন পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু তার চোখের সামনে সেই দৃশ্য বারবার ভেসে উঠছিল , যেখানে তার কিছু সঙ্গী রেল লাইনে ঘুমিয়ে পড়ার পর মালগাড়ির ধাক্কায় কাটা পড়ে। কেবল কোনরকমে চার পাঁচ জন বেঁচে গিয়েছিল, যারা লাইন থেকে একটু দূরে শুয়েছিল। তাই পরমেশরা নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করত কারণ সে জীবিত বাড়ি ফিরতে পেরেছিল।
গ্রামে ফিরেছে তা প্রায় মাস চারেক হোলো। হাতের টাকা পয়সা, রেশন সবই প্রায় শেষ হতে চলেছে। পরিবারে একটা দুশ্চিন্তার আবহাওয়া বইছিল। পরমেশরা মন খারাপ নিয়ে বাড়ির বাইরে বসেছিল। সে দেখল তার সামনে এসে একটা ঝাঁ চকচকে বাইক এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। বাইক থেকে সানগ্লাস পড়া একটা ছেলে নেমে বলল
“প্রণাম পরমেশরা কাকু!”
“কে”? পরমেশরা উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটিকে চেনার চেষ্টা করল।
“আমি ভোলু, আপনাদের ইউনিয়নের চিঁথড়ুর ছেলে।”
“আরে তাইতো! তোমার সাজপোশাক দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। এই নতুন মোটর সাইকেলটা কার?”
“এটা আমার আমার কাকু, নতুন কিনেছি। আপনি তো জানেন আপনার সাথে ফেরার সময় বাবা লাইনে কাটা পড়েছিল। আমরা তখন খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। তারপর কেন্দ্র সরকার, রাজ্যসরকার মিলে দশ লাখ টাকা দিল, এখনো এদিক ওদিক থেকে টাকা আসার কথা আছে।”
পরমেশরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। ছেলেটি বলে যাচ্ছিল “বাড়িটা পাকা করে নিলাম, সামনের দিকে একটা ঘরে মুদিখানা দোকান খুলবো, আর এই মোটর সাইকেলটা নিলাম।”
এটা বলে ভোলু চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে মোটর সাইকেল স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে গেল।
পরমেশরা ভাবতে লাগল “ভাগ্যবান কে?”
আরও পড়ুন
৮ডিসেম্বর পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইসির পৃথক দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত
হয়রানিসহ নারীদের কূপ্রস্তাব দেয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের জাহিদুর রহিম