হোম » প্রধান সংবাদ » জামালপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করোনা টিকা কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে

জামালপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করোনা টিকা কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে

রবিউল হাসান লায়ন,জামালপুর: জামালপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করোনা টিকা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। করোনা ভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে টিকা গ্রহীতাগণ চরম দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলেছে জামালপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে। বিশ্ব বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণার ফলে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে সেই টিকা ২১ জানুয়ারি ২০২১ এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ২০ লাখ ডোজ টিকার চালান বাংলাদেশে পৌঁছায়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি করোনার দ্বিতীয় চালানও দেশে পৌঁছেছে। জামালপুরে গত ৩১ জানুয়ারি কোভিট-১৯ এর ৭২ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছায়। ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মির্জা আজম এমপি। তার পর থেকেই করোনা টিকা প্রয়োগে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম হেয়ালীপনা, দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার প্রমান দিয়েছে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
২ মার্চ মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের সাইকেল স্ট্যান্ডে স্থাপিত অস্বাস্থ্যকর উন্মুক্ত পরিবেশে করোনা টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। টিকা গ্রহীতা নারী, পুরুষ, বৃদ্ধাদের জন্য বিশেষ কোন বসার ব্যবস্থা না রেখে উন্মুক্ত ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশুর চিকিৎসার ন্যায় মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। টিকা দেওয়ার স্থান উন্মুক্ত হওয়ায় ধূলাবালিসহ হাসপাতাল ড্রেনের দূর্গন্ধ, যানবাহনের শব্দে অতিষ্ট হচ্ছেন করোনা টিকা গ্রহীতাগণ। যা অমানবিক আখ্যায়িত করে অভিযোগ তুলেছেন ভক্তভোগী সেবা গ্রহীতাগণ।
এছাড়াও করোনা টিকা প্রদানে ১২ জন নার্স, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সেবায় ৪ জন, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী আরসিওআই ৪জন প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সকল স্বাস্থ্য উপকরণ ছাড়াই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার কারণে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবী ও স্বেচ্ছাসেবীরা অভিযোগ করে বলেন করোনা ভাইরাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন উপকরণ কর্তৃপক্ষ তাদের দিচ্ছেন না এবং সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবীদের কোন খাবারের ব্যবস্থাও করছেন না জামালপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে করে স্বাস্থ্যসেবী ও সেবা গ্রহীদাতের মধ্যে ব্যপক অসন্তুষ দেখা গেছে। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে  অনেক নারী, পুরুষ এবং বৃদ্ধাগণ অভিযোগ করে জানান, করোনা ভাইরাস থেকে বাচাঁর জন্য আমরা করোনা টিকা নিতে এসেছি।
এখানে অস্বাস্থ্যকর, দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ দেখে আমরা হতাশ। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ বাংলাদেশর মানুষকে সম্মান জানিয়ে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের থেকে অনেক আগেই করোনা টিনার ব্যবস্থা করেছেন। অথচ সরকারের সকল বিধি নিষেধ অমান্য করে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম হেয়ালীপনা, দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতা দেখিয়ে অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধযুক্ত
পরিবেশে করোনা টিকা প্রদান করে চলছে জামালপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতন নাগরিক হিসেবে যা আমাদের কাম্য নয়। চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলায় যদি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাহলে করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধের চেয়ে সংক্রমন বেড়ে যাওয়ার ঝুকি অনেক বেশি।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ভবন, সিভিল সার্জন কার্যাল, হাসপাতাল প্রশাসন কার্যাল ও মেডিকেল কলেজের মতো এতো বড় বড় জায়গা থাকতেও অমানবিক ও চরম অবহেলা দেখিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জামালপুর শহরের সাধারণ মানুষের শরীরে পশু চিকিৎসার ন্যায় করোনা টিকা প্রদান করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের শরীরে যারা টিকা প্রয়োগ করছেন সেই স্বাস্থ্যসেবীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেন্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিহীন সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়াও টিকার রাখার নির্দিষ্ট তাপমাত্রা (২ থেকে ৮ ডিগ্রি) তে থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। উন্মুক্ত খোলামেলা অস্বাস্থ্যকর স্থানে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বুথের স্থান পুরাতন জং ধরা টিনের চালা থাকায় অতিরিক্ত তাপ মাত্রার কারণে টিকার কার্যকরিতা ব্যহত হচ্ছে।
ফলে টিকার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সারাদেশের বিভিন্ন বুথে যেখানে করোনার টিকা সুন্দর-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও এসি রুমের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। সেখানে জামালপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাধ্য হয়ে মানুষ করোনা টিকা গ্রহণ করছেন। অনেকেই আবার অস্বাস্থ্যকর ও দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ দেখে টিকা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। যার দায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছে অনেকেই। করোনা টিকা সেবা গ্রহীতারা জেলা স্থাস্থ্য বিভাগের এহেন কর্মকান্ডে তীব্র নিন্দা, অসন্তুষ ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষিদের শাস্তির দাবী জানান। এছাড়াও যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে যাতে করে সঠিক তাপমাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ অঞ্চলের মানুষকে করোনা টিকা প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস জানান, করোনা টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন কালে আমরা জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে টিকা কার্যক্রম চালু করি। মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকার কারণে সেখান থেকে সরিয়ে আমরা হাসপাতাল চত্বরে টিকা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করেছি। জায়গার সংকুলান না থাকায় এখানেই টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে জামালপুরের জেলা প্রশাসকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ ক্রমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শফিকুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে জামালপুর সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করুন। আমি মাত্র আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করি এছাড়া আর কিছু নয়।  এ বিষয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, করোনা টিকা সংক্রান্ত সকল বিষয় জামালপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেখেন। আমরা শুধু হাসপাতালের টিকার বুথ স্থাপনের জায়গা দিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের আর অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব দেয়নি জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাড. মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান, ২ মার্চ সকালে আমি ও আমার সহধর্মিণী করোনা টিকা গ্রহণ করতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হই।
হাসপাতালে গিয়ে দেখি আগে যেখানে সাইকেল স্ট্যান্ড ছিলো, সেখানে একটি ঘর তার ঠিক মাথার দেড়ফুট উপরে পুরাতন জং ধরা টিনের একটি চালা। সেখানে ভ্যাকসিন গুলো যে তাপমাত্রায় থাকার দরকার তার কোন ব্যবস্থা নেই। যে ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিবে তার কোন বসার ব্যবস্থা নেই। অত্যান্ত অস্বাস্থ্যকর, দূর্গন্ধময়, খোলা জায়গা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। শতাবধির সবচেয়ে কঠিন সময়ের এ ভ্যাকসিন যা মনোরম ও সুন্দর পরিবেশে দেওয়ার কথা ছিলো। যে খানে গেলেই মানুষের মনটা ভালো হয়ে যাবার কথা। আর সেখানে গেলে মানুষের মন আরও খারাপ হবে। মানুষ আরও হতাশা হবে এবং দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ দেখে সেখান থেকে উঠে আসবে। এই ভ্যাকসিন মানুষের কোন কাজে লাগবেনা। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত কষ্ট করে বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন এনেছে মানুষকে দেওয়ার জন্য। জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের উদাশিনতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতার কারণে শেখ হাসিনার অর্জন আজ ব্যর্থতায় পর্যবর্শিত। তিনি করোনা টিকা কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি জানান।
উল্লেখ্য বিশ্বমহামারী করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে বিশ্বের কোন দেশই রেহায় পায়নি। ৩১ ডিসেম্বর চীনে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। গত বছরের ৩১  ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম ধরা পড়ে করোনা আক্রান্ত রোগী। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। কিছুদিন পর ভারত ও পাকিস্তানেও করোনায় আক্রান্তরোগী সনাক্ত হয়। গত বছরের ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গত বছরের ৫ এপ্রিল রোববার জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বীর ঘোষেরপাড়া গ্রামে ৩০ বছর বয়সি এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। এর আগে ৪ এপ্রিল শনিবার  জামালপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন।
বিশ্বে করোনার নতুন রূপ যা বি-ওয়ান-ওয়ান-সেভেন বা ভিওসি নামে পরিচিত ভাইরাসটি যুক্তরাজ্যে প্রথম পাওয়া গেলেও তা এখন পর্যন্ত বিশ্বের কমপক্ষে ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন রূপের কথা গত ১২ জানুয়ারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিও এইচ ও এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলো।  বর্তমানে করোনার নতুন রূপ বিশ্বের ৫০ দেশে পাওয়া গেছে। গতকাল ২ মার্চ ২০২১ইং পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্ত ৫,৪৬,৮০১, সুস্থঃ- ৪,৯৭,৭৯৭, মৃত্যু ৮,৪১৬ জন।
সারা বিশ্বে আক্রান্ত ১১,৫০,১৮,৪৯৭, মৃত্যু ২৫,৫০,৮৫৬, সুস্থঃ ৯,০৭,৪১,৬১০ জন। এই মহামারী ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার যখন দেশের মানুষকে বাচাঁতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে জামালপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের হেয়ালীপনা, অদক্ষতা, অযোগ্যতার কারনে করোনা টিকা গ্রহীতারা টিকা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা মনে করছেন এমন পরিবেশে টিকা নিতে এলে করোনা প্রতিরোধের থেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। তাই তারা টিকা গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
error: Content is protected !!