হোম » সারাদেশ » সিরাজগঞ্জে মাল্টা চাষ করে সফল পিতা-পুত্র

সিরাজগঞ্জে মাল্টা চাষ করে সফল পিতা-পুত্র

হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : অল্প জমিতে কম টাকা খরচ করে অধিক মুনাফার আশায় সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাল্টা চাষ। আবহাওয়া ও চাষের উপযোগী মাটি হওয়ায় মাল্টার বাণিজ্যিক ভাবে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকেরা। বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগানে মাল্টা ও কমলা, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে পিতা-পুত্র সফলতা অর্জন করেছেন। মাল্টা চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

 

সেই সাথে মাল্টা বাগানের বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন জেলা হর্টিকালচার সেন্টার। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচা গ্রামে ২ একর জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগানে ৪০০ শতাধিক বারি-১, বারি-২ মাল্টা, চায়না-৩ কমলা, ভিয়েতনামী খাটো জাতের ওপি নারিকেল, আম (অমরুপালী) লিচুসহ ১০/১২টি প্রজাতির ফলের চারা রোপন করেন পিতা-পুত্র। তবে মাল্টা ও কমলার প্রতি তারা বিশেষ নজর দিয়েছেন।

 

সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তাদের মাল্টা বাগানকে আরও বৃহত্তর পরিসরে উৎপাদন করে সারা দেশে তাদের চারা ও ফল ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পিতা-পুত্রের মাল্টার বাগান দেখে বর্তমানে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৫০ জন কৃষক মাল্টার চারা রোপন করে বেশ লাভবান হয়েছেন। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় বাজারে এ ফলের বেশ চাহিদা দেখে অনেকেই এখন মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। দেশি জাতের মাল্টা বাগান থেকে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

 

বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগানের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে জেলা কৃষি স¤প্রসারণের উপ-পরিচালক মোঃ আরশেদ আলীর সহযোগিতায় ৪০০টি চারা সরকারী প্রণোদনা পেয়ে মাল্টার বাগান শুরু করেন তিনি। পিতার সফলতা দেখে ছেলে মোতালেব হোসেনও এই বাগানে পরিচর্যা শুরু করেন। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। মাত্র তিন বছরেই পিতা-পুত্র আজ সফল মাল্টা চাষী ও উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায়  পরিচিত লাভ করেছেন। বছরে তাদের বাগান থেকে প্রায় লক্ষ্যাধিক টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। ছেলে মোতালেব হোসেন বলেন, এই বাগানে শুধু বিষমুক্ত মাল্টাই চাষ হচ্ছে।

 

আগামী দিনে আরোও নতুন নতুন ফলের চারাসহ বিদেশি জাতের আমের ফলন শুরু করা হবে। আমাদের সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও এ ধরনের বাগান করতে আগ্রহী হোক। এছাড়াও উল­াপাড়া উপজেলার রাঘব-বাড়িয়া গ্রামের ফায়ার সার্ভিস কর্মী হুমায়ন কবিরের বাড়ির পাশে ৭০ শতক জমিতে শখের বসে বারি-২ জাতের মাল্টা চাষ করে। বছর  পেরুতেই বাণিজ্যিক আকার ধারণ করেছে তার শখের বাগান। চলতি মৌসূমে তার ৩৫০টি মাল্টা গাছে ফলন ভালো হয়েছে। সেই মাল্টাগুলো বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। হুমায়ন কবির জানান, দাম তুলনামূলক কম আর সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে বাড়ছে এ ফলের চাহিদা। বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানেও। বাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

 

হর্টিকালচার সেন্টারের সিনিয়র উদ্ধান তথ্যবিদ আবু সাদাত মোহাম্মাদ তোয়াব জানান, বারি-১, বারি-২ মাল্টা, চায়না-৩ কমলা, ভিয়েতনামী খাটো জাতের ওপি নারিকেল, আম (অমরুপালী) লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চারা আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে থাকি। সেই সাথে ওই ফল বাগানে আংশিক পরিচর্যা করে থাকি। এবং কৃষকদের প্রয়োজন মোতাবেক হর্টিকালচার অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আবু হানিফ জানান,  অল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুকছে কৃষকেরা। মাল্টা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগীতাও করা হচ্ছে। সেই সাথে আধুনিক কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

error: Content is protected !!