হোম » ধর্ম » সিরাজগঞ্জে তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা

সিরাজগঞ্জে তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা

হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সনাতন ধর্মাম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজা। আসন্ন পূজাকে ঘিরে সিরাজগঞ্জে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন প্রতিমা। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের বেশির ভাগ প্রতিমা তৈরির অবকাঠামোর কাজ শেষ। এখন দেবী দূর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দিনরাত রং-তুলির কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা।

এবার শহরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা না থাকলেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় ৫১৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু সন্তোস কুমার কানু।

সরেজমিনে বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রঘাটের পালপাড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। তাদের যেন দম ফেলার সময় নেই। পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করছে গৃহবধু, নারী বাদ পড়েনি শিশুরাও। কেউ কেউ খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন কেউবা নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী অনিন্দ্য সুন্দর রূপ। প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে রং তুলির কাজ। রং তুলিতে সাজানো হচ্ছে প্রতিমার অপরূপ সৌন্দর্য। তবে দেবী দুর্গাকে নানা রঙে রাঙালেও প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিমা কারিগররা।

পঞ্জিকা মতে আগামী (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবের। দেবীর এবার আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল ছত্রভঙ্গ অর্থাৎ ( অশুভ) পৃথিবী এবার অনেকটা অস্থির ও বিশৃঙ্খল থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন পুজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।

কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর গুপিনাথ পাল বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪২ বছর যাবৎ এই পেশায় জড়িত রয়েছি। প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিমার মুল্য জানতে চাইলে গুপিনাথ পাল আরও বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। গতবারের মুল্যতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা। প্রতিটি প্রতিমা ১৫ হাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে এক সেট।

প্রতিমা শিল্পী রণজিত পাল ও সুভাষ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, খড় ও সুতলি-রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রতিমা তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রিও কমে গেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এবার শারদীয় দূর্গাপুজা আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবের। দেবীর এবার আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল অশুভ।

তিনি আরও বলেন, ইতি মধ্যে জেলা প্রশাসনের দিক থেকে আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। এবার জেলায় ৫১৬ টি পূজা মন্ডবে আনন্দ উৎসবে পালিত হবে শারদীয় দুর্গা পূজা।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, পূজায় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

এছাড়াও আনছারসহ মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পূজামণ্ডপগুলো নজরদারিতে রাখবে। পাশাপাশি সবকটি পূজা মণ্ডপ গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে বলে তিনি জানান।

Loading

error: Content is protected !!