হোম » ধর্ম » সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন

সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন

মোহাম্মদ হানিফ (গোলজার হানিফ) নোয়াখালী প্রতিনিধি : জীবন আসলে একটা বৃহত চক্র। একেক সময় একেক চ্যালেঞ্জের সামনে পরবেন, উত্থান-পতনের স্বীকার হবেন। “সময়” সব সময় এক রকম কাটবে না এটা মেনে নিতে শিখুন।আমাদের জানতে হবে  আমি কে ? কেন এসেছি এই পৃথিবীটিতে ? এই মনুষ্য দেহ ধারনের কারনই বা  কি ? এই জীবন নিয়ে কি করবো ? শুধু সুখে-দুঃখে  সংসার করবো, আর দুই দিন পরে, কবরে চলে যাবো।
একদিন ছিল যে আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে ছিল না এখন অস্তিত্ব আছে আবার এমন একদিন আসবে এই পৃথিবী থেকে আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। রয়ে যাবে কিছু সৃতি। আবার সেই অধিকাংশ স্মৃতিও পৃথিবীর নিষ্ঠুরতায় হয়তোবা মানুষের হৃদয়ে নাও থাকতে পারে। তবে আপনার কৃতকর্ম এই পৃথিবীতে চিরজীবন রয়ে যাবে যেটা কারোর কাছে অনুসরণযোগ‍্য কৃতকর্ম হিসেবে চিরজীবন লালিত হবে।
সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কখনোই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি, ঘটে না আর ঘটবেও না। মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কিন্তু অমর থেকে যায় কেবল তার সৃষ্টিকর্ম।
সৃষ্টিকর্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। সবুজ শ্যামলে সুন্দর করে সাজিয়েছেন পৃথিবী। তবে তার সেরা সৃষ্টি হলাম আমরা মানুষ জাতি। তিনি আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন। আমাদের জীবন বড় ক্ষণস্থায়ী আর তা আটকে আছে সুনির্দিষ্ট বাঁধাধরা কিছু নিয়মে। এই জীবনের আয়ু অসীম নয়, অনন্তকালের নয়; এর শেষ আছে। জীবনের শুরু হয় জন্ম দিয়ে আর এর পরিসমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু নিশ্চিত।
প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে বেঁচে থাকার আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য থাকে। তাই মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামও ভিন্ন। কেউ বেঁচে থাকে অন্যের জন্য, কেউ বেঁচে থাকে নিজের জন্য, কেউ বেঁচে থাকে অন্যের ক্ষতি করার জন্য, কেউ বেঁচে থাকে আখিরাতে সফলতা পাওয়ার জন্য সত্যি বলতে মানুষের বেঁচে থাকার অনেক উদ্দেশ্য থাকে।
কিসের জন্য পৃথিবীতে আসা আমার?? আমি কোথায় ছিলাম কেন এ পৃথিবীতে আসলাম??  পৃথিবী থেকে আমি কোথায় চলে যাব?? কখনো কি ভেবে দেখেছি আমি?? এমন প্রশ্ন নিজেকে বার বার করুন এক সময় না এক সময় সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।ক্ষনিকের এই দুনিয়ায় আমরা ইচ্ছা  করলেও  কেউ থাকতে পারবো না তবে ইচ্ছা করলে    ভালো  কিছু করে যেতে পারি যেটা চিরজীবনই এই পৃথিবীতে থেকে যাবে।
অকল্যাণ থেকে নিজেকে ও অপরকে বাঁচিয়ে রাখা ও  কল‍্যান প্রতিষ্ঠা করার জন‍্যই মহান স্রষ্টা এই পৃথিবীতে আপনাকে  পাঠিয়েছেন। শুধু উদরপূর্তির জন‍্য নয়, উদারতা প্রদর্শনের জন‍্যও আপনাকে পাঠানো হয়েছে। শুধু স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন‍্য নয়, অপরের স্বার্থটাকেও উদ্ধার ও বাস্তবায়ন করার জন‍্যও আপনাকে পাঠানো হয়েছে।
স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার করার কাজ জন্তু-জানোয়ারের, মানুষের নয়। নিজের জন‍্য যেটা ভালো মনে করো অপরের জন‍্যও সেটা ভালো মনে করতে হবে। তাহলেই আপনার প্রকৃত মনুষ্যত্বের প্রতিফলন ঘটবে।
নিজের আমিত্ব কে অপররের কাছে বিলীন করতে না পারলে কখনো স্বরণীয় ও নিরাহংকারী মানুষ হওয়া যায় না। নিজের বড়ত্ব নিজের কাছে রাখলে  বড় হওয়া যায় না বরং নিজের  বড়ত্ব অপরের অন্তরে থাকলেই আপনি বড় হবেন। নিজের কাজের জন‍্য আপনি কেন অহংকার করবেন? বরং আপনাকে নিয়ে অন‍্যরা অহংকার করবেন।নিজের কাজে নিজে প্রশংসা করে অহংকার করলে আপনি অহংকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন পক্ষান্তরে আপনার কাজে অন‍্যরা প্রশংসা করলে সর্বমহলে আপনি প্রশংসনীয় হবেন।
মানুষের জীবনের মূল্য কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না। তাই সবার পরিবারের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে প্রত্যেকের জীবন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।প্রত্যেক মানুষের কাছে তার জীবনটাই সবচেয়ে দামি। মানুষ এই জীবনের জন্য কতকিছুই না করে! নিজের জীবনের স্বাভাবিক পরিসমাপ্তির জন্য মানুষ অর্থ খরচ করে কত দূর-দূরান্তেই না যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্র জীবনে যেমন স্বাভাবিকভাবে সে পৃথিবীতে এসেছে, তেমনি স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চায়। কিন্তু অনেক সময় অনেকের ভাগ্যে সেই স্বাভাবিক মৃত্যু জোটে না।
এমন জীবন করিও গঠন মরিলে হাসিবে তুমি কাদিবে ভুবন”।পক্ষান্তরে ” এমন জীবন করিও না গঠন মরিলে কাদিবে তুমি হাসিবে ভুবন” বাস্তবতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ঠিকই আমরা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেব তবে বিদায় নেবে না কৃতকর্ম। আমার এই  কৃতকর্ম এই পৃথিবীকে হয় ইতিবাচক সৃতি উপহার দেবে নতুবা নেতিবাচক তিক্ত সৃতি নিজেকে চিরজীবনই অভিশংসন করবে।
আসলে আমাদের জীবনের মহৎ কোনো উদ্দেশ্য নেই । আপনি ধরে নিতে পারেন জীবনটা একটা সাঁকোর মতো । সাঁকোটির কোনো কোনো স্থান মজবুত এবং কোনো স্থান নড়বড়ে ।
আমরা যখন সাঁকো দিয়ে পাড় হই তখন সেটির একটি শুরুর প্রান্ত এবং শেষের প্রান্ত থাকে,অর্থাৎ আমাদের গন্তব্য থাকে সাঁকোটি পাড় হয়ে অন্য পাড়ে গিয়ে পৌঁছা । কিন্তু জীবন হলো এমন একটি সাঁকো যেটা দিয়ে আপনাকে হাঁটতে হবে যতক্ষণ বেঁচে থাকতে চান, কিন্তু পূর্বনির্ধারিত কোনো গন্তব্য ঠিক করা থাকে না । তার মানে একটি অন্তহীন পথচলা । সরল ভাষায় আমি বলি জীবন হলো একটি যাত্রা, এবং আপনার জীবন তখনই সফল যখন আপনি একজন ধৈর্যশীল এবং ভালো যাত্রী ।
ঠিক এরকম একটি দৃশ্যের কথা কল্পনা করা যাক যেখানে আপনার সামনে একটি গরম কফির কাপ এনে হাজির করা হলো । কফির কাপ থেকে ধোয়া উড়ছে ।এখন, মনুষ্যপ্রকৃতির সাধারণত বস্তুর স্থায়িত্ব নিয়ে খুব চিন্তিত থাকে এবং একটি নির্দিষ্টি সময়ের মধ্যে কার্য সম্পাদন শেষ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে । আমরা জানি যে কফিটি যখন শীতল হয়ে যাবে তখন সেটার আসল স্বাদ আর পাওয়া যাবে না, ঠিক এজন্য আপনি চাইবেন কফিটি উষ্ণ থাকতেই সেটিকে তৃপ্তিসহ শেষ করতে ।
ঠিক একই ব্যাপার ঘটবে যখন আপনাকে একটি আইসক্রিম হাতে দেয়া হবে । আপনি চাইবেন সেটি গলে যাওয়ার আগেই সেটার পূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করতে, এবং যদি কেউ আপনাকে নিচের দুইটি আইসক্রিম থেকে একটি বাছাই করতে বলে তাহলে আপনি প্রথমটিই বাছাই করবেন, কারণ দ্বিতীয়টি ইতোমধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ।
কোন কিছুই আজীবন টিকে না। একটি পেন্সিল বা খাতা, ভবন, রাজ প্রাসাদ, গাছপালা, জীবজন্তু সবকিছুই কালের স্রোতে হারিয়ে যায়। মানুষও একটি প্রাণী, তাই তার ও মরতে হয়। আজীবন বেচে থাকলে আর কাজ সম্পন্ন করার অভিপ্রায় থাকতো না মানুষের। সবাই বেচে থাকলে এবং প্রতিদিন মানুষ জন্মাতে থাকলে, এই পৃথিবীর বুকে এত মানুষের জায়গা হতো না। তাই মানুষ ও সব প্রাণীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই জগত টিকে আছে, থাকবে।
পৃথিবীতে এমন কোনো সৃষ্টি নেই, যার জন্ম হয়েছে কিন্তু মৃত্যু হবে না। মৃত্যুকে থামানো যায় না বলেই মানুষ কখনো অমর হতে পারে না। মানুষের পঁচনশীল শরীর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে মিশে যায় পৃথিবীর মাটিতে। মানুষ হয়তো অন্যের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু স্বশরীরে কেউ কোনোদিন অমর হতে পারে না। মানুষ মৃত্যুকে না চাইলেও মৃত্যুই মানুষকে কেঁড়ে নিয়ে যায় এই সুন্দর বসুধা থেকে। মৃত্যু কাউকে কখনো অমর হতে দেয় না। মৃত্যু প্রত্যেক জীবের জন্য অবধারিত সত্য। আল্লাহতালা আমাদের সকলকে এই কথাগুলোর উপরে আমল করার তৌফিক দান করেন আমিন
error: Content is protected !!