হোম » অন্যান্য বিভাগ » কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের ১৭ তম প্রয়াণ দিবস পালিত

কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের ১৭ তম প্রয়াণ দিবস পালিত

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিশিষ্ট কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের ১৭ তম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকালে উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা বাজারে কবিরত্ন এম এ হক স্মৃতি পাঠাগারের আয়োজনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ দিবস পালিত হয়।
অনুষ্ঠানে কবিরত্ন এম এ হকের জীবন ও কর্মের নানাদিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন, টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান, টগরবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কামরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. দাউদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম্য চিকিৎসক খিজির আহমেদ, উপজেলা ক্যাবের সভাপতি কবির হোসেন, কবিপুত্র জাহিদ হাসান বাহার ও হৃদয়ে আলফাডাঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মিয়া রাকিবুল প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, কবিরত্ন এম এ হক বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার। কবিরত্ন এম এ হকের সাহিত্যিক চেতনায় লোকজীবন ও লোক-সংস্কৃতির গভীর রূপ এবং আধুনিক জীবনবোধে দুয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান এবং কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার দ্বিবেণী সমন্বয়কে করেছে প্রকাশিত।
আলোচনা সভা শেষে কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
প্রসঙ্গত, এলাকায় ‘কবিরত্ন এম এ হক’ ও ‘কবি সাহেব’ নামে পরিচিত এই কবির জন্ম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। কবিরত্ন এম এ হক কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করে খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে একই কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিএ ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। নিজ এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পণ্ডিত, শিক্ষানুরাগী হিসাবেও সমধিক পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।
কবিরত্ন এম.এ.হক তার সাহিত্যিক জীবনে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এবং বিখ্যাত সনেটকার সুফী মোতাহের হোসেনের অত্যন্ত স্নেহভাজন। জসীমউদ্দীন এবং সুফী মোতাহের হোসেন ছিলেন তার সাহিত্যের গুণমুগ্ধ পাঠক ও অনুপ্রেরণা দাতা। তার কাব্য-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জসীমউদ্দীন ও সুফী মোতাহের হোসেন স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে এম.এ.হকের ‘এপার-ওপার’ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেন। কবিরত্ন এম.এ.হক বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার। তার রচিত নাতিদীর্ঘ গ্রন্থতালিকা থেকে তার সাহিত্য-প্রতিভার বৈচিত্র্য অনুমান করা যেতে পারে- ‘শুকতারা’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘পথদিশারু’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘এপার-ওপার’ (লোকগানের সংকলন), ‘কচি মনের খোরাক’ (পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে দ্রুত পঠন হিসেবে যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাঠ্য ছিল), ‘দর্দে নবী’ (ইসলামি গান), ‘হক-বচন’, ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা’ (গ্রন্থটিতে অপ্রচলিত এবং হারাতে বসা অসংখ্য বাগধারাকে তিনি সংকলিত করেন এবং স্কুল-ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে ছন্দে বাক্য রচনা করেন), ‘দেশের গান’ (দেশাত্মবোধক গানের সংকলন), ‘দাদুর ছড়া’ (শিশু-সাহিত্য), ‘স্মৃতিকথা’ (মুনীর চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, কবি শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, বিজয় সরকার, কবি আশরাফ আলী খান প্রমুখের সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে রচিত), ‘কাঙ্গাল পথিক’ (কাব্যগ্রন্থ) এবং ‘মুক্তির গান’ (সুফি মতবাদী কবিতা)।
এম এ হকের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া ‘যশোরের লোক কবি’, ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে। সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, বর্তমান বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে কবিরত্নের নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়েছিল। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধান’-এ কবিরত্নের জীবন ও তার কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কবিরত্ন এম এ হক ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
error: Content is protected !!