হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : জলের উপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় লাল, সাদা পদ্মে ছেয়ে গেছে সোনাকান্ত বিল। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভুত করে যে কোন বয়সকে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে। এই পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশপাশের পদ্মপ্রেমী লোকজন। দৃষ্টিনন্দন এই পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর থেকেও আসছেন অনেক দর্শনার্থীরা।
প্রাকৃতিকভাবে ছেয়ে থাকা পদ্ম ফুলের বিলটির অবস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামে সোনাকান্ত বিল নামে পরিচিতি পেয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাকান্ত বিলের রয়েছে প্রায় ৪০ বিঘা জমি। এসব জমি উল্লাপাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী আমডাঙ্গা, সড়াতৈল, অলিপুর ও বাগধা গ্রামবাসীর। বিলের জমিতে বছরে একবার বোরো ধান চাষ হয়। অপেক্ষাকৃত নিচু জমি হওয়ায় বর্ষা বছরের ৬ মাসেরও বেশি সময় এখানে পানি জমে থাকে। বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্ম ফুল জন্মে।
এলাকাবাসী জানান, এলাকার অভাবী পরিবারের ছেলে মেয়েরা এই বিলে নেমে পদ্ম ফুল সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি থাকেন। প্রতিটি ফুলের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। এই ফুল অনেকেই প্রছন্দ করে এবং ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।পদ্ম ফুল তোলা শিশু মনির ও মাহি জানায়, প্রতিদিন পদ্ম গাছের কাঁটার আঘাত সহ্য করে তারা ফুল তুলে। এসব ফুল তারা বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র এই দুই মাস তারা ফুল তুলতে পারবেন। এতে বিলের মালিকেরা কোন সময়ও বাধা দেয় না বলে শিশুরা জানিয়েছেন।
সোনাকান্ত বিলের পদ্ম ফুলের সমারোহ দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মাহমুদ, বাবলা শেখ, নাঈম হোসেন ও রুবেল বলেন, গত দুই বছর আগেও এই বিলে পদ্ম ফুল ছিলো হাতেগোনার মতো। কিন্তু এবছর এই বিলে ফুটেছে সাদা- গোলাপী রংয়ের অজ¯্র পদ্ম ফুল। চোখ যত দূরে যায় শুধু পদ্ম আর পদ্মের মেলা বসেছে এখানে। বিলের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর পদ্ম ফুল তুলছে।
আরেক দর্শনার্থী সামিউল হাসান বলেন, তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ শহরে। তিনি তার আত্মিয়ের বাড়ি উল্লাপাড়ার সলঙ্গায় বেড়াতে এসেছেন। এই বিলে পদ্ম ফুল দেখার জন্য আসার চেষ্টা করেন। গত বছর আসতে পারেন নাই বলে এবার ছোট ভাই ও বোনদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এক সঙ্গে শত শত ফুল দেখে তিনি খুবই আনন্দিত। তবে বিলে নৌকার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো লাগতো বলে জানান তিনি।
পদ্ম ফুল দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, এমন পদ্ম সচরাচর দেখা যায় না। আর পুরো বিলজুড়ে পদ্মের এমন গোলাপি আভা দেখা সত্যি আনন্দের। তবে বিলে যাতায়াতের কোন রাস্তা ও নৌকা না থাকায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তারা বলেন, এক সময় আমাদের এই রূপসী বাংলায় অনেক পদ্ম দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্ম ফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।
জেলা জুড়ে পরিচিতি পাওয়া সোনাকান্ত বিলের জমির মালিক উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের রফিকুল ও আমডাঙ্গা গ্রামের ছাত্তার বলেন, এই বিলে বর্ষা মৌসুমে পদ্ম ফুল ফোটে। এতে বিলের সৌন্দর্য বাড়ে। এলাকার ও দূরের লোকজন প্রতিদিন পদ্ম ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখতে বিল পাড়ে আসেন। অনেকে পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শামীমুর ইসলাম বলেন, দুই বছর হলো বর্ষায় উপজেলার সোনাকান্ত বিলে পদ্ম ফুলের দেখা মিলছে। পদ্ম ফুলে ঔষধি গুণাগুণও অনেক। কৃষি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় শাপলা ও পদ্মের দেখা মিলছে। কৃষক জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে দিলে এই ফুল বিলুপ্তির হাত থেকে ফিরে আসবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, এটি জলজ উদ্ভিদ। পাখির দ্বারা পদ্ম ফুলের বীজ বিলে পড়ে গাছ জন্মায় এবং সেখান থেকেই পদ্ম গাছের বিস্তৃতি হয়। সোনাকান্ত বিল এবার পদ্ম ফুলেছেয়ে গেছে। অনেক দর্শনার্থী এ বিলে আসছেন। বিলটি এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন
মুসলিমদের ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
বগুড়া গাবতলীতে প্রিসাইডিং অফিসারসহ গ্রেফতার দুই
ভৈরবে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক