হোম » অন্যান্য বিভাগ » চরাঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

চরাঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

হুমায়ুন কবির সুমন: সিরাজগঞ্জের যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে এবার মরিচ চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। পলিমাটিতে তুলনামুলক কম খরচ ও পরিশ্রমে কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের। চরের উৎপাদিত মরিচ আকারে পরিপুষ্ট ও রং ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
জেলা কৃসি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১৪৫৬ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে।
এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩২০৪ মেট্রিক টন। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে এ বছর চরের কৃষকরা মরিচ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

জানা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলে মৌসুমি মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। তবে কাজীপুরের নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, তেকানিসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে এ মরিচ চাষ হয় বেশি।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসকল ধু-ধু বালু চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মরিচের চাষ শুরু করে কৃষকেরা। পলিমাটির উর্বরতা থাকায় কম খরচে মরিচ চাষে ফলন ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। বর্তমানে ফসলের মাঠে এখন মরিচ উত্তোলনে ব্যস্ত নারী-পুরুষেরা।

স্থানীয় বাজার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। যমুনার চরে উৎপাদিত কাঁচামরিচ ও শুকনো মরিচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা।

প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া হাট বসে। এই হাট থেকে দেশের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ব্যাপারীরা মরিচ কিনে নিয়ে যান। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে মরিচ কিনে চরের তপ্ত বালুর ওপর শুকিয়ে নিয়ে যান।

কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া চরের কৃষক জলিল শেখ জানান, কয়েক দফা বন্যার পানি আসা-যাওয়া ও অতিবৃষ্টিপাতের কারণে মরিচ চাষে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিলো।

পরে চরাঞ্চলে মরিচ চাষ শুরু করেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে মরিচের চাষ ভালো হয়েছে। এতে ক্ষতিপুশিয়ে উঠতে পারবো।

এছাড়া রোগবালাই না থাকায় এবার মরিচের ফলন বাম্পার হয়েছে। আশা করছি বিঘাপ্রতি ৪০/৫০ মণ কাঁচা মরিচ উঠবে এবং বিঘাপ্রতি ১০/১২ মণ শুকনা মরিচও ঘরে উঠবে।

তেকানি চরের কৃষক আয়নাল হক জানান, মরিচ চাষে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়।

চৌহালী চলের মরিচ চাষি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ৩২ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছি। কাঁচা মরিচ বিক্রি করেও চার মণ শুকনো মরিচ রেখেছেন।

তার এই ৩২ শতক মরিচ ক্ষেতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। শুকনো মরিচ বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। বর্তমান বাজারে চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে এই চাষী জানান।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা চরের কৃষক আবুল হোসেন, বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ২০ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি। আরও চার মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছি। এখন যদি শুকনো মরিচ বিক্রি করি তাহলে প্রায় এক লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছেন।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৪৫৬ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে।

এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩২০৪ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মরিচ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজার ভালো থাকায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। আগামীতে তারা আরও বেশি জমিতে মরিচ চাষে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
error: Content is protected !!