হোম » অন্যান্য বিভাগ » সোনাইমুড়ীতে মামলার ফাঁদে নিরীহ মানুষ হারাচ্ছেন সর্বস্ব

সোনাইমুড়ীতে মামলার ফাঁদে নিরীহ মানুষ হারাচ্ছেন সর্বস্ব

মোহাম্মদ হানিফ: নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর উপজেলার দিনমজুর রফিক মিয়া। ৪ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা এলাকার আলিকরিম দরগাবাড়ীতে। দীর্ঘ ২০ বছর থেকে বাবা কিনে দেওয়া আধা ডিসিম জমিতে থাকছেন ঝুঁপড়ি ঘর করে। সেই জমিতে গত কয়েকদিন পূর্বে জাকাত ফাউন্ডেশনের সহায়তায় দুই রুমের একটি ঘর তুলছিলেন তিনি। তবে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে আদালতের নির্দেশে। আর এই শীতে ঝুঁপড়ি ভেঙ্গে ঘর তৈরী করতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন সন্তানদের নিয়ে।
রফিক মিয়ার অভিযোগ, প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান মিয়া ও তার মেয়ে ছাবিনা ইয়াসমিন জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা করেছেন তার বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে তাকে। আর এই মামলার কারনে জাকাত ফাউন্ডেশন ওই জমিতে গৃহনির্মাণ সহায়তা বন্ধ করে দিচ্ছে। মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে এখন নিস্ব তিনি। শুধু রফিক মিয়াই নয়, একই বাড়ির বয়স্ক  প্রতিবন্ধী নজির আহম্মেদ আজও আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধেও জমিজমা সংক্রান্ত মামলা করেছেন আব্দুল মান্নান মিয়া ও তার মেয়ে ছাবিনা ইয়াসমিন। বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী নজির আহম্মেদ কাঁদতে কাঁদতে জানান,  জীবিত থাকা অবস্থায় ইউনুস মিয়ার কাছথেকে তিনি এক ডিসিম জমি খরিদ করেন। পরে ইউনুস মিয়া মারা যাওয়ার পরে তার ছেলে আব্দুল মান্নান জমির দাবিতে মিথ্যা মামলা দিয়ে গত ২ বছর থেকে হয়রানি করছেন।
ওই বাড়ির কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, আব্দুল মান্নান দরগাবাড়ীর ইউনুস মিয়ার ছেলে। একটি হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে নাম পরিবর্তন করে বসবাস করছেন যশোরের রেল ষ্টেশন এলাকায়। বৃদ্ধ বাবার কোন খোঁজ খবর না রাখায় শেষ বয়সে তিনি বসত ভিটার বিভিন্ন অংশ প্রতিবেশিদের কাছে বিক্রি করে। সেই সময় ইউনুস মিয়া তার প্রতিবেশি তোফায়েল মিয়ার কাছে আধা ডিসিম জমি বিক্রি করে রেজিষ্ট্রি করেন। ইউনুস মিয়া মারা যাওয়ার পরে তার ছেলে আব্দুল মান্নান মিয়া নিজের মেয়ে ছাবিনা ইয়াসমিনের নামে ওই আধা ডিসিম জমি রেজিষ্ট্রি করে দেন। এখন বিশ বছর থেকে বসত করা রফিক মিয়া নিজের জমিতে নতুন ঘর তুলতে গেলে বাধা দিচ্ছেন ছাবিনা ইয়াসমিন। এ ঘটনায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা শালিসের মাধ্যমে জমি মাপ-ঝোপ করে উভয়পক্ষে বুঝিয়ে দিলেও তা মানেনা ছাবিনা বেগম। পরবর্তীতে তিনি বাদি হয়ে নোয়াখালী আদালতে জমিজমা সংক্রান্ত মামলা করেন। বর্তমানে ওই জমিতে স্টে-ওয়ার্ডার দিয়েছেন আদালত।
রফিক মিয়া জানান, ২০০৪ সালে তাদের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। আর এই জমির যেই কাগজের বুনিয়াদে ছাবিনা বেগম দাবি করছেন সেই কাগজ রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে গত বছরের জুন মাসের ১২ তারিখে। এখন সেই কাগজ দিয়ে মিথ্যা মামলা করে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার কারনে জাকাত ফাউন্ডেশনের সহায়তা হারাতে বসেছেন তিনি।
এবিষয়ে কথা হলে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার হুমায়ুন কবির জানান,  রফিক মিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন আব্দুল মান্নান মিয়া ও তার মেয়ে ছাবিনা ইয়াসমিন। আব্দুল মান্নান খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। দীর্ঘদিন থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। তার বৃদ্ধ বাবার কোন খোঁজ খবর তিনি রাখেতেন না। বাবা মারা যাওয়ার পরে বাড়িতে এসে প্রতিবেশীদের নামে জমিজমা সংক্রান্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এর আগে জমি-জমার বিষয়ে কয়েক দফায় জমি মেপে বুঝিয়ে দিলেও তারা মানেনা। বিভিন্ন ভাবে মামলা দিয়ে নীরিহ মানুষদের হয়রানি করছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে  ছাবিনা বেগম বলেন, জমি-জমার বিষয়ে তিনি কিছুই বোঝেননা। বাবা আব্দুল মান্নান মিয়ার নির্দেশে তিনি মামলা করেছেন। এসময় তার জমির বৈধতার কাগজ দেখতে চাইলে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। তবে সমস্ত কাগজ যশোরে তার বাবার কাছে আছে বলে জানান।
error: Content is protected !!