হোম » জাতীয় » শেরপুরে ব্রীজের অভাবে দূর্ভোগ ১০ গ্রামের মানুষ

শেরপুরে ব্রীজের অভাবে দূর্ভোগ ১০ গ্রামের মানুষ

মোঃ শরিফ উদ্দিন: দশানী নদীর উপরে একটি ব্রিজের অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১০ গ্রামের মানুষ।

বছরের অর্ধেক সময় বাশের সাকো ও অর্ধেক সময় নৌকায় কৃষিপণ্য আনা নেয়াসহ হাজার হাজার মানুষকে চলাচলে চরম দূর্ভোগ
পোহাতে হচ্ছে।

প্রতিবার ভোটের সময় প্রতিশ্রæতি দিলেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা আজো। তাই ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রক্ষপুত্র ও দশানী নদীর বন্যা থেকে রক্ষা করতে কামারেরচর বাজার ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ দেয়ার ফলে শেরপুর সদর উপজেলার ১নং কামারেরচর ইউনিয়নের ৬নংচর, ৬নং চর নতুনপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, নয়াপাড়া, ভাটিপাড়া, উজানপাড়া, কামারপাড়া, গোয়ালপাড়া, পয়েস্তীরচর জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

শেরপুর সদর উপজেলার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে কামারেরচর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী নদী।

এ গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে দশানী নদীর উপর বাঁশের ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো। এ অঞ্চলের মানুষ শুকনো মৌসুমে শত কষ্ট স্বীকার করে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। শুধু দুর্ভোগই নয় এ সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রীর স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

তখন এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। বিশাল চরাঞ্চলের শাক-সবজী, ধানসহ নানা ফসল আনা-নেয়াতেও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যও পায় না এ এলাকার কৃষকরা।

বারবার নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রæতি দেয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে আর কেউ প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেনা। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দশআনি নদী পারাপার করতে হয় শিশু কিশোর, ছাত্র, বৃদ্ধ সবাইকে। আবার অনেক সময় সঠিক সময় রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অনেকেই। সময়মতো শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুলে। তাই এলাকাবাসী এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়।

স্থানীয়রা বলেন, আমাদের এ ব্র‍িজটি যে কবে হবে, আমরা জানিনা। জন্মের পর থেকেই এরকমই দেখতাছি। সরকার সারা দেশেই উন্নয়ন করেছে।

অথচ আমাগো অল্প একটু ব্রিজ করে দেয় না। খালি ভোটের সময় আসলে ভোট নেয়। ব্রিজ না থাকায় সরাসরি ফসল বাজারে নিতে পারি না তাই ফসলের ভালো দাম পাই না।

৬নংচরের পল্লী চিকিৎসক আসাদ মিয়া বলেন, আমরা এ ব্রিজের অভাবে সারাবছর দুর্ভোগের স্বীকার হয়। আমাদের চরে প্রচুর সবজির আবাদ হয়। চরের এ সবজি সারাদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ব্রিজের অভাবে কৃষকরা সময়মত কোনকিছু বাজারে নিতে পারে না। ফলে কৃষিপণ্যের প্রকৃত দাম পায় না কৃষকরা। ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

৬নং চরের এনামুল হক বলেন, নদীর এপারে অনেক কৃষি পণ্যের আবাদ হয়। হাজার হাজার মণ বেগুন, পাট, গম, ধান নষ্ট হয়। কারণ যোগাযোগ ভালো না থাকায় পণ্য বাজারে তুলতে পারি না আমরা। তাই লাভবান হতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানাই।

কামারের চর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব বলে, শুকনা মৌসুমে আমরা এই বাশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাই। এ সময় আমাদের
বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। অনেকসময় নদীতে বই খাতা পরে ভিজে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। ভয়ে একা নৌকা দিয়ে পার হতে পারি না।

স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। মোঃ হানিফ বিএসসি বলেন, আমি অনেক বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষকতা করি। নদী পারাপারের জন্য আমাদের নানা ধরনের অসুবিধা হয়।

দেখা যায় আমরা সময়মত স্কুলে যেতে পারি না। বর্ষার সময় নদী পার হওয়ার জন্য বসে থাকতে হয়। এই ৬নং চরের দশআনি নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষাব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে।

এ নদীতে শুকনো সময় পন্য আনা-নেয়ার একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি আর বর্ষার সময় নৌকা। তাও পন্য পারাপার করতে হয় অনকে ঝুঁকিতে। পন্য পারা-পারের সময় অনেক সময় মারাও পড়ে ঘোরা।

সিদ্দিক মিয়া বলেন, খরান সৃজনে আমরা অনেক কষ্ট করে ঘোড়ার গাড়ী করে মালামাল নদী দিয়ে পার করি। অনেক সময় ঘোড়া মাল নিয়ে আসার সময় পানির মধ্যে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। আমার গত দুই বছরে দুইডা ঘোরা মইরা গেছেগা। এরকম অনেকেরই একই অবস্থা।

এ বিষয়ে ১ নং কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, দশআনি নদীতে একটি সেতু নির্মাণ মানুষের প্রাণের দাবি। স্থানীয় সরকার দলীয় এমপিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।

শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেরপুর সদরের দশআনি নদীতে সেতু তৈরির যাবতীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো।

ক্যাপশন- শেরপুর সদর উপজেলার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণে কামারেরচর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী নদী। এ নদীর উপর বাঁশের ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে স্থানীয়রা।

error: Content is protected !!