হোম » প্রধান সংবাদ » শেরপুর শহরের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বুদবুদ আকারে বেরুচ্ছে গ্যাস

শেরপুর শহরের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বুদবুদ আকারে বেরুচ্ছে গ্যাস

মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি :শেরপুর শহরের প্রায় বেশির ভাগ রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে তিতাসের সঞ্চালন লাইনের গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে বুদবুদ আকারে গ্যাস নির্গত হলেও এর সমাধানে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে আতঙ্কে আছে ওইসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, স্বাভাবিক দিনগুলোতে বুদবুদ দেখা না গেলেও বৃষ্টি হলে কিংবা রাস্তায় খানাখন্দে জমে থাকা পানিতে দেখা যায় এর ভয়াবহ চিত্র। এসব বিষয়ে জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

শেরপুর তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য মতে, শেরপুরে প্রায় ১২ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। এতে গ্যাসের সুবিধা পাচ্ছে চার হাজার দুইশ গ্রাহক।

সম্প্রতি সরেজমিনে জানা যায়, শহরের রাজাবাড়ী কলেজ গেইট, বাগরাকসা, গৃদ্দানারায়ণপুর, শিববাড়ি, নাগপাড়াসহ বিভিন্ন প্রধান সড়ক ছাড়াও প্রায় প্রতিটা মহল্লায় মাটির নিচে গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের গ্যাস বুদবুদ আকারে বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গ্যাসের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতিনিয়ত বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হওয়ার ফলে অনেক জায়গায় গ্যাস কম পাওয়া যায়। এ ছাড়া দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনগুলো শনাক্ত করে মেরামতের দাবি তাদের। আবার অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ত্রুটিযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি। অথচ পানি জমে থাকলে দাহ্যপদার্থ গ্যাসের উৎস খোঁজে বের করা সহজ বলেও মনে করেন তারা।

গৃদ্দানারায়ণপুরের বাসিন্দা নারায়ন সাহা বলেন, ‘দিন-রাত যে পরিমাণ গ্যাস বের হচ্ছে, এতে করে একশ পরিবার এই গ্যাস দিয়ে রান্না করতে পারবে। আর যখন বৃষ্টি হয়, তখন ভাঙা রাস্তাগুলোতে জমে থাকা পানিতে দেখা যায় কীভাবে গ্যাস বের হয়। অনেকদিন ধরে এই সমস্যা চললেও এর সমাধানে এখনো কাউকে আমরা পাইনি।’

শিববাড়ি এলাকার মিষ্টার বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করছি, যেন রাস্তার নিচে থাকা গ্যাসের লাইনগুলো চিহ্নিত করে তা মেরামত করা হয়। আমরা যেন স্বস্তিতে রাস্তায় চলতে পারি।’

নাগপাড়া মহল্লার কাকন মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির সময় অনেক বুদবুদ আকার হয়। দেখে মনে হয় যেন ভেতরে পানি ঢুকছে। শুধু এই জায়গায় না, আশপাশেও জমে থাকা পানিতে এমন চিত্র দেখা যায়। লাইনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের জন্য দাবি করছি।’

কলেজ মোড় এলাকার সুজন মিয়া বলেন, ‘রাস্তার মধ্যে পানির যেভাবে বুদবুদ আকার দেখা যাচ্ছে, হয়তো এটা একসময় অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। এতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করব, যেন দ্রুত এর সমাধান করেন।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাইপের মাধ্যমে যে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, সেগুলো মনে হয় দুর্বল হয়ে গেছে বা বিভিন্ন জায়গায় লিকেজ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই দেখা যায়, পাইপ যেদিক দিয়ে গেছে সেদিক দিয়ে বুদবুদ বের হচ্ছে। এমনকি দেশলাইয়ের মাধ্যমে দেখা গেছে, সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে। এই লিকেজগুলো যদি দ্রুত মেরামত করা না হয়, ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

এ বিষয়ে জানতে শেরপুর তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দুর্জয় খকসীর কাছে গেলে প্রথমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। পরে এ প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘শহরের যেসব জায়গায় লিকেজের আলামত পাব এবং যেগুলো ব্যস্ততম বা জনবহুল জায়গা আছে, মানুষের চলাচল বেশি, সেই জায়গাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে দেব। সাধারণ মানুষ বা গ্রাহকসহ সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, যখনি আপনারা এমন লিকেজের আলামত দেখবেন, তখনি আমাদের জানাবেন। আসলে আমাদের পক্ষে সব লিকেজের আলামত বের করা কঠিন।’

গ্রাহকরা অভিযোগ দেওয়ার পরও কেন এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসেনি, যার ফলে সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে দ্রুতই লিকেজ হওয়া জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব।’

Loading

error: Content is protected !!