হোম » প্রধান সংবাদ » বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদী থেকে বালু তুলে তীর ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ!

বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদী থেকে বালু তুলে তীর ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ!

এম.এ রাশেদ,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর তীর ভরাট করে বানানো হচ্ছে গ্রামীণ একটি সড়ক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন নির্মাণাধীন ওই সড়কের পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুটের মধ্যেই তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সেই বালু দিয়েই ভরাট করা হচ্ছে নদীর তীর। এ অবস্থায় নির্মাণাধীন সড়কটির স্থায়ীত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, করতোয়া নদীর তীর ভরাট কাজে পাশেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এমনকি সেই পানির চাপে এই সড়কটিও
ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। আর এই অভিনব সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে করতোয়া নদী ঘেষা উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খাগা দক্ষিণপাড়া এলাকায়। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ সড়ক কানেক্টিভিটি (আইসিআইপি) প্রকল্পের আওতায় জাপান সরকারের অর্থায়নে এই উপজেলার মির্জাপুর ভিমজানী থেকে শুভলী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। আতাউর রহমান খান লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলমান এই সড়ক নির্মাণ কাজটির ব্যয় ধরা হয়েছে নয় কোটি টাকা। এছাড়া সড়কটির খাগা দক্ষিণপাড়া অংশে করতোয়া নদীতে
বিলীন হয়ে যাওয়া দেড়শ’ মিটার নদীর তীর ভরাট করে সড়ক নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লাখ টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীর ভরাট করে সড়ক বানানো হচ্ছে। এজন্য বেশকয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। সড়কটির পাশেই বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার মেশিন। এসব মেশিনের মাধ্যমে দিনরাত সমানতালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সেই বালু ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর তীর ভরাট ও রাস্তা নির্মাণ কাজে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নবনির্মাণাধীন সড়কসহ বেশকয়েকটি বসতবাড়ি। অথচ স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তি বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন। এমনকি রহস্যজনক কারণে এহেন অবৈধ কর্মকর্তা ওই কর্তা সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুলবুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, সড়কটি নির্মাণের জন্য প্রথমে সড়কের দু’পাশের ফসলি জমির মাটি কাটা হয়। এতে বড় বড় গর্ত ও খাল তৈরী হয়েছে। আর এখন নদীর তীর ভরাট করা হচ্ছে পাশেই ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে। এভাবে তৈরী করা এই নবনির্মিত সড়কটি কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া এমন অভিনব সড়ক নির্মাণ জীবনে কোনোদিন দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা। খানপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, অনেক চেষ্টা তদবিরের পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে
করে এলাকাবাসীর মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। কিন্তু কাজের বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও তাদের কাউকেই তিনি চেনেন না। তাই সড়কের পাশ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানলেও নিষেধ করার কাউকে পাননি বলে জানান তিনি। এদিকে এই সড়ক নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. রায়হান বলেন, প্রকল্পের যথাযথ নিয়ম মেনেই সড়কটি নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া নদীর তীর রড দিয়ে পাইলিংয়ের পর ভরাট করা হচ্ছে। তাই বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে এই সড়কটি ধ্বসে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করেন তিনি। উপজেলা প্রকৌশল
অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, খানপুর দক্ষিণপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন সড়কের পাশ থেকে কোনো বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। নদীর তীর ভরাট করার জন্য ঠিকাদারের আগে কেটে রাখা মাটি কেবল সেখানে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বিষয়টি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন এলজিইডির এই কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক নির্মাণে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া এই বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে

Loading

error: Content is protected !!