হোম » প্রধান সংবাদ » উল্লাপাড়ার এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী নিয়োগের নামে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

উল্লাপাড়ার এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী নিয়োগের নামে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে লোক নিয়োগের নামে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত বছরের ২৫ আগষ্ট এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (শূন্য) পদে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের যোগ্যতানুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দেওয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক বরাবর সোনালী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ফি জমা দিয়ে উক্ত পদের জন্য আবেদন করেন ১৭ জন চাকরি প্রার্থী৷ তারপরওই শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন এবং বিদ্যুৎসাহী সদস্য আল-আমিনের ঘুষ বানিজ্যের দরদাম। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পদের জন্য যে সর্বচ্চ টাকা দিতে পারবে সেই চাকরি পাবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন।

এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক (প্যাড়া) মোঃ আল্লেক মিয়া। শিক্ষক সংকট থাকায় স্কুলটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি পাঠদান করেছেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরবর্তী আল্লেক মিয়া কে স্কুলের সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন বলেন উক্ত পদের জন্য আবেদন করতে। চাকরি তাকে(আল্লেক) দিবে এই শর্তে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন আশরাফুল আলম মামুন। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আল্লেক মিয়া। পরবর্তী চাকরি দিবে সভাপতির সাথে এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভুক্তভোগী আল্লেক মিয়ার সাথে দরকষাকষি করে ২০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা হয়।

শর্ত অনুযায়ী আল্লেক মিয়া এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয় অফিস কক্ষে এক বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মামুন ও বিদ্যুৎসাহী সদস্য আল-আমিনের কাছে জমি বিক্রির প্রথমে ৬ লাখ টাকা,তারপর আরো ২ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন আল্লেক কে তাগাদা দেন বাকি ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করার জন্য। আল্লেক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাকি ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করে সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন কে জানান। সভাপতি মামুন ও স্কুলের অন্য সদস্যদের সাথে ঘুষের টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয় । এতে আল্লেকের বাকি ৪ লাখ টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান মামুন।

অভিযোগ উঠেছে এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আশরাফুল আলম মামুন একই পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বলে এই গ্রামের শামসুল এবং নাদা গ্রামের রাশেদুল ইসলামের কাছেও মোটাংকের টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে কে চাকরি পাবেন এমন আশংকায় সবাই ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বলে মামুন কে । চাকরি প্রার্থীদের অনিশ্চয়তায় ঘুষের টাকা ফেরতের জন্য ভুক্তভোগীরা মামুন কে বারবার তাগাদা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

আশরাফুল আলম মামুনের ঘুষ বানিজ্যের কথা এখন এলংজানি গ্রামে টক অফ দ্যা টাউন। আশরাফুল আলম মামুনের বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের জামায়াতের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে সংশ্লিষ্ট থাকায় তাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় আঃলীগের নেতাকর্মীরা দ্বিমত পোষণ করেন এবং মামুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়। অজানা শক্তির প্রভাবে সবকিছু শত অভিযোগ উপেক্ষা করেই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আশরাফুল আলম মামুন।সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরেই যেন সোনার হরিণ পেয়ে যায় তিনি ৷ তার অনিয়মে উৎকণ্ঠা শিক্ষক কর্মচারী এবং অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আলম জানান অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার (শূন্য) পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরে সভাপতি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে ৩ জনের কাছ থেকে টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি।এ ঘটনায় সভাপতি মামুন নিজেই গ্রাম্য শালিসে ২ জন কে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেও আল্লেক কে এখনো টাকা ফেরত দেয়নি। প্রধান শিক্ষক আরো জানান যোগ্যতা এবং সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেওয়ার হবে, কোন দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

মহসিন আলম নামে এক অভিভাবক জানান, আশরাফুল আলম সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। আশরাফুল চাকরির কথা বলে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সবার সাথে প্রতারণা করেছেন। এর আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।

স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ জানান এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রতিনিয়ত দুর্নীতি করে যাচ্ছে। চাকরির নামে ঘুষ বাণিজ্য করে সবার সাথে প্রতারণা এবং ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং সভাপতি পদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানান তিনি।

এলংজানি স্কুলের সভাপতি আশরাফুল আলম মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে ঘুষ নেননি বলে দাবি করেন। তিনি জানান পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা যদি এধরনের ঘুষ বাণিজ্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষ নেওয়া দুজনেই সমান অপরাধী। তবে চাকরির দেওয়ার কথা বলে যদি কেউ ঘুষ নিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ বন্ধ এবং তদন্তের জন্য অভিযোগ দিতে পারে৷

Loading

error: Content is protected !!