হোম » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে শহীদের বাড়ির পাশে পাথর ভাঙ্গার মেশিন দ্বারা শব্দ দূষনের ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

সুনামগঞ্জে শহীদের বাড়ির পাশে পাথর ভাঙ্গার মেশিন দ্বারা শব্দ দূষনের ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর-সৈয়দপুর পাকা রাস্তার মেরামত কাজে নির্বাচিত ঠিকাদারের পরিবর্তে ভাগীদারদের সহায়তায় প্রক্সি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করানো,প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে শহীদ
আবুল হোসেনের বসতঘরের সামনে রেখে ব্যবহৃত পাথর ভাঙ্গার মেশিন দ্বারা শব্দ দূষন সৃজন ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানোর অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

 

২৩ নভেম্বর সোমবার দুপুরে সদর থানার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের ৭৪ জন সচেতন নাগরিক এই অভিযোগটি দায়ের করেন। অভিযোগে ঠিকাদার আতিকুর রহমান ও তার ভাগীদার সুমনসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইব্রাহিমপুর-সৈয়দপুর পাকা রাস্তার মেরামত কাজে নিয়োজিত ভাগীদার ও ঠিকাদারদের মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জসীটভূক্ত আসামীও রয়েছে।

 

সুনামগঞ্জ শহরতলীর ইব্রাহিমপুর-সৈয়দপুর গ্রামের পাকা সড়কের  কিলোমিটার ৪ শত ৫০ মিটার রাস্তা মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচিত ঠিকাদার শহরের নতুনপাড়া নিবাসী আতিকুর রহমানকে ঠিকাদার নির্বাচিত করে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। ২২ নভেম্বর রোববার সকাল ১১টায় নির্বাচিত ঠিকাদারের পরিবর্তে তার নিয়োজিত ভাগীদার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত মংলা মিয়ার পুত্র সুমন ও জর্জরিয়া গ্রামের আবু হানিফসহ আরো কয়েকজন ভাগীদারকে সরজমিনে গিয়ে রাস্তার কাজ করতে দেখতে পান এলজিইডির ডিবিডি রায়হান কবীর ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হরজিত সরকার। এসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহমদ আলী তালুকদার,ব্যবসায়ী নেতা ফুল মিয়া,

 

 

সিরাজ মিয়া,সোহেল মিয়া ও বাবলু মিয়াসহ ইব্রাহিমপুর পশ্চিমপাড়ার নাগরিকগন রাস্তার মেরামত কাজের প্রকল্পস্থানে সিটিজেন চার্টার না রাখা, ঠিকাদারের পরিবর্তে সুবিধাভোগী ভাগীদার দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করানো,নিম্নমানের ইট পাথর বালি সিমেন্ট ব্যবহারসহ সরকারী প্রকল্পের কাজে অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ আনেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ঠিকাদারের ভাগীদার সুমন মিয়া ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রতিবাদী লোকজনকে হামলা ও মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখায়। ফলে উত্তেজিত লোকজন ভাগীদার সুমনকে মারতে উদ্যত হলে ঘটনাস্থলে ছুটে
যান একজন সাংবাদিক। সাংবাদিক দেখে ভাগীদার সুমন মিয়া আরোও উত্তেজিত হয়ে উঠে।

 

এবং দুইশো টাকা দিলে সাংবাদিক কেনা যায়। আমরা ঠিকাদারের পিছনে ২শত টাকার জন্য কত সাংবাদিক লাইন মারে বলে দম্ভোক্তি প্রকাশ করলে উত্তেজিত লোকজন আরো চড়াও হন। এসময় সাংবাদিক আল-হেলাল ও প্রকৌশলী হরজিত সরকার উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। উর্ধতন কর্মকর্তা রায়হান কবীর কাজ পরিদর্শনে গিয়ে রাস্তার কাজের গার্ড ওয়ালের সাথে পা লাগানো মাত্র ইট পড়ে যায়।

 

এর মধ্যে দিয়ে তিনি হাতেনাতে কাজে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ঠিকাদার এর ভাগীদার সুমনকে তিরস্কার করেন। তিনি নির্দেশ দেন ২৩ নভেম্বর এর মধ্যে প্রকল্পের কাজের শুরুতে ও শেষাংসে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তিনি স্থানীয় জনগনকে কাজে অনিয়মের যেকোন প্রমান পাওয়ামাত্র জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানানোর জন্যও অনুরোধ করেন।

 

এদিকে উর্ধতন কর্মকর্তাদের তিরস্কারের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে কথিত ভাগীদার সুমন মিয়া একজন লেবার ঠিকাদারকে দিয়ে ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রতিবাদী জনগণের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে থানায় একটি লিখিত মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করলে সদর থানার এসআই মিজানুর রহমান সরজমিনে ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। স্থানীয় লোকজন ঠিকাদারের ভাগীদার সুমন মিয়া কর্তৃক অসদাচরনের অভিযোগ উত্থাপন করে থানা পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানান।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুব আলম ও থানা প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন আমরা কাজে অনিয়ম পেয়েছি বলে ঠিকাদারকে তিরস্কৃত করছি এবং চাপের মধ্যে রাখছি।
আগামী জুনের মধ্যে যেকোন মূল্যে ঠিকাদারকে কাজ শেষ করতেই হবে। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবেনা। তারা স্থানীয় জনগনকে রাস্তার কাজটি দেখভালসহ সুচারুরুপে সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবাণ জানান।

 

নির্বাচিত ঠিকাদার সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার শাহপুর নিবাসী মোঃ আতিকুর রহমান স্থানীয় জনগনের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বলেন,৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার কার্যাদেশ পেয়ে আমি রাস্তাটির কাজ শুরু করেছি। এ কাজে আমার ২ জন অংশীদার নিয়োজিত রয়েছে। আমার কাজে কোন সমস্যা হলে আমি অবশ্যই স্থানীয় জনগনকে শেয়ার করবো। তবে রোববার আমি থানা পুলিশে কারো বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করিনি। কথিত ঘটনার সময় আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলামনা।

 

নির্বাচিত ঠিকাদার আতিকুর রহমানের এ বক্তব্যে প্রমাণ হয় তিনি প্রকল্পের কাজে আদৌ সংশ্লিষ্ট নন এবং এলাকাবাসী ঘুনাক্ষরেও প্রকল্পকাজে তাকে দেখেননি। সরকারী বরাদ্দ আত্মসাতের অসদুদ্দেশ্যে প্রকল্পকাজে ইচ্ছেকৃতভাবে অনিয়ম সংগঠিত করে ভাগীদাররা এলাকাবাসীর ক্ষতিসাধন ও সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ভাগীদার ঠিকাদারদের সকলেই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছেন।

 

ঠিকাদারী প্রকল্পের কাজে পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করে সরকারের দুর্নাম রটনা করা তাদের রুটিন কাজ ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগে দাবী করা হয়। ভাগীদার সুমন এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে জোর করে ইব্রাহিমপুর বাজার সংলগ্ন লোক চলাচলের রাস্তা ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে শহীদ আবুল হোসেনের বসতঘরের সামনে একটি পাথর ভাঙ্গার মেশিন দ্বারা দিনরাতব্যাপী কাজ চালায়। এতে পাথর ভাঙ্গার মেশিনের বিকট শব্দে ঐ শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী শান্তিতে ঘুমাতে ও স্বাভাবিকভাবে সাংসারিক কাজকর্ম করতে পারছেনা।

 

এছাড়া ভাগীদারদের দ্বারা পরিবেশ বিপর্যয় ও শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষসহ প্রকৃতি। এমতাবস্থায় ভাগীদারদের ব্যবহৃত পাথর ভাঙ্গার মেশিনটি অবিলম্বে জব্দ করার দাবী জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা। তারা আরো জানান,ভাগীদার সুমন গায়ের জোরে ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন করে প্রকল্পের স্থানে মাটি ভরাট করতে গিয়ে স্থানীয় অনেক কৃষকের রেকর্ডীয় জমি নষ্ট করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কাউকে কোন সান্তনা পর্যন্ত দেয়নি।

 

বরং ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনকে থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে অভিযোগের দায় থেকে আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা নাটক সাজাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগের অনুলিপি সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ,সদর উপজেলা চেয়ারম্যান,সুনামগঞ্জ সদর মডল থানার অফিসার ইনচার্জ কে প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে সদর উপজেলা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন,অভিযোগে বর্ণিত বিষয়ে আমি অবশ্যই
এ্যাকশনে যাবো।

error: Content is protected !!