হোম » প্রধান সংবাদ » দুর্নীতি প্রমাণিতঃ তদন্ত প্রতিবেদনের দ্রুত কার্যকর চান শিক্ষকরা, সংবাদ সম্মেলন করবেন রাবি ভিসি

দুর্নীতি প্রমাণিতঃ তদন্ত প্রতিবেদনের দ্রুত কার্যকর চান শিক্ষকরা, সংবাদ সম্মেলন করবেন রাবি ভিসি

রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
এতে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা শিক্ষকরা দ্রুত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর আসছে, সেই প্রেক্ষিতে সরকার ও জাতির কাছে আমার অবস্থান ক্লিয়ার করার জন্য আগামী রবিবার (২৫ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করবো।’ অন্যদিকে, অভিযোগকারী শিক্ষকদের একজন ম্যানেজন্টে বিভাগের অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী। ইউজিসির ডাকা শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ায় সত্যি ভালো লাগছে।
তবে আরও ভালো লাগবে তদন্ত প্রতিবেদনে যে সব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হলে। এই রিপোর্টটি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি যুগান্তকারী রিপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকবেন বলে মনে করি।’
ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি জেনেছেন উল্লেখ করে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও অভিযোগকারী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমরা চাই তদন্ত কমিটির সুপারিশ দ্রুত সময়ে কার্যকর করে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষমুক্ত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে শিক্ষা, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক চর্চার উর্বর ভূমি। এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ইউজিসি’র প্রতিবেদনে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার আয়ের এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খুঁজে বের করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া তদন্ত কাজে অসহযোগিতার জন্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সুপারিশে।
যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা আবার পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে। জানতে চাইলে ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বুধবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে আমরা রাবি প্রশাসনের বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দফতর এসব বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গণমাধ্যমকে বলেন, এখনাে প্রতিবেদনটি হাতে আসেনি। পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসিতে দাখিল করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ।
পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে সদস্য করা হয়। এরপর অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে একটি উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে ইউজিসি। দুই দফায় শুনানি হলেও বর্তমান প্রশাসনের কেউ অংশগ্রহন করেননি।
error: Content is protected !!