হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » ভৈরবে প্রতিহিংসার রোষানলে ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

ভৈরবে প্রতিহিংসার রোষানলে ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

এম আর ওয়াসিম, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার মোহাম্মদ  শেফায়েত উল্লাহ মিথ্যা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন বলে জানান তার পরিবারবর্গ। তিনি গত ৭ আক্টোবর বুধবার মানিক হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামী হিসেবে আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে বিজ্ঞ আদালত। উল্লেখ্য যে গত ২০১৬ সনে ৭ মে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মরহুম আবু বক্কর সিদ্দিক চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়।

পরে বার্ধক্য জনিত কারনে নির্বাচনের ১ বছর পর গত ২০১৭ সনে ১০ মে  তিনি মৃত্যু বরণ করেন। উক্ত শূন্য আসনে ২০১৭ সানে ১৩ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মরহুম আবুবক্কর সিদ্দিক মিয়ার পুত্র সরকার মোহাম্মদ শেফায়েত উল্লাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করে। কিন্তু এলাকার দ্বন্দ্ব, কোন্দল আর ঝগড়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতার অভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গত ৩ বছরে ১ দিনের জন্যও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি বলে জানায় এলাকাবাসী। ফলে বাড়িতে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি।

এলাকা সূত্রে আরো জানা যায় যে, শেফায়েত উল্লাহ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে মানিক হত্যা ও ১৫ জুলাই ২০১৮ ইং তারিখে সিএনজি চালক সিদ্দিক হত্যা, এই দুটি মামলার আসামী হিসেবে শেফায়েত উল্লাহ কে অভিযুক্ত করা হয়। পরে তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে সিদ্দিক হত্যা মামলার চার্জশীট থেকে শেফায়েত উল্লাহ ও তার ছোট ভাইয়ের নাম বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানায় তার ছোট ভাই আলামিন। আলামিন আরো জানায় ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের লোভে আমার ভাই কে এপর্যন্ত প্রায় এক ডজন মামলার আসামী করা হয়েছে।

প্রতিহিংসার রোষানলে মানিক হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামী হয়ে আজ আমার ভাই কারাগারে। এটাও যে মিথ্যা মামলা৷ তাও একদিন প্রমানিত হবে ইনশাআল্লাহ। এলাকার ভুক্তভোগীরা জানায়, সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। পক্ষ দুটি হলো নুরার বাড়ি ও কির্পিন বাড়ি। নুরার বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুসলিম মিয়া এবং কির্পিন বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক মাস্টার।

 নুরার বাড়ির মুসলিম মিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন ইউপি চেয়ারম্যান সরকার মোহাম্মদ শেফায়েত উল্লাহ ও কির্পিন বাড়ির পক্ষ নেন সাদেকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন। ভুক্তভোগীরা আরো জানায়, পক্ষ বিপক্ষের জেরে রসুলপুরের প্রায় ৭ বাড়ির মানুষ মিথা মামলা থেকে জামিন পেলেও জামিন পাচ্ছেন না অত্যাচারীদের হাত থেকে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায়  অতিকষ্টে মানবেতর  জীবন যান যাপন পার করছেন।

উক্ত ইউনিয়নের দু’পক্ষের লোকজনের  সংঘর্ষের কারনে অহিদ মিয়া, মোবারক মিয়া, মানিক মিয়া ও সিদ্দিক মিয়া নামে তিনজন খুন হয়। একইসঙ্গে উভয়পক্ষের নারী ও শিশুসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এতে করে গ্রাম ছাড়া হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। এই সব মানুষের ঘর গুলোতে এখন কুকুর আর শিয়ালের বসবাস। গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না হাজারও মানুষ। প্রবেশ করলেও ফিরতে হয়  অসুস্থ কিংবা জখমী হয়ে। এই বিরোধের জেরের শেষ কোথায় জানতে চাই এলাকার নিরীহ মানুষজন।

সাদেকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার আমলে (২০১১-১৬) গত পাঁচ বছরে হত্যা তো দূরের কথা, থানায় ২০/২২ টি মামলা হয়েছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু শেফায়েত উল্লাহর আমলে ৪ টি খুন সহ প্রায় শতাধিক মামলা হয়েছে। আমার আমলে গ্রাম্য আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছি। কিন্তু অপর দিকে শেফায়েত উল্লাহ এপর্যন্ত একদিন এসেও ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্সে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করেনি।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন যে, ৩ হত্যা মামলার আসামী শেফায়েত উল্লাহর ছোট ভাই ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে নানা উস্কানীমূলক কথা বার্তা পোষ্ট। এইসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা মুঠোফোনে জানান, কোন জনপ্রতিনিধি অভিযুক্ত হিসেবে কারাগারে গেলে স্থানীয় সরকারের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাদেকপুরে ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান পরিষদের দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি

error: Content is protected !!