হোম » প্রধান সংবাদ » পীরগঞ্জের কৃষি অফিসারের যত দূর্ণীতি পর্ব -১

পীরগঞ্জের কৃষি অফিসারের যত দূর্ণীতি পর্ব -১

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা এস এম গোলাম সারোওয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সরকার যখন প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে এই করোনা কালে সু-দৃষ্টি দিচ্ছে টিক তখনই ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে অভিনব কায়দায় অনিয়ম দূর্নীতিতে ব্যস্ত রয়েছেন। জানাগেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট (পি আই ইউ) ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলোজী প্রোগ্রাম ফেশ প্রজেক্ট (এন এ টি পি-২) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাজার প্রবেশাধীকার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক এর সহায়তায় গৃহিত একটি প্রকল্প হলো (এন এ টি পি-২) এই প্রকল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু হইল ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সি আই জি) মজবুদ ও টেকসই ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে (সি আই জি) সমূহকে স্থায়ীত্বশীল কৃষক সংগঠন হিসাবে রূপদান এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে নারী কৃষক ও নৃত্বাত্বিক গোষ্টির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। যাহা দেশের ৫৭টি জেলার ২৭০টি উপজেলায় ২৭,১৫০টি, (সি আই জি) এই প্রকল্প কার্যক্রমের আওতাভুক্ত। তবে এই প্রকল্পের আওতায় এগ্রিকালচারাল (এ আই এফ-২ )বিশেষ একটি বাতায়নে যার আওতায় উৎপাদনশীল প্রযুক্তি গ্রহণ/বিস্তর এবং বাজার প্রবেশাধিকার সহজীকরনের নিমিত্তে সম্ভাবনাময় উপ-প্রকল্প প্রনয়ন এবং বাস্তবায়নে যোগ্যতা সম্পন্ন (সি আই জি) সমূহকে প্রতিযোগিতা মূলক ম্যাচিং গ্রান্ড বা অনুদান প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করবে বলে (এ আই এফ-২) এ বলা হয়েছে। স্বচ্ছতা অতঃপর জবাবদিহিতা বজায় রেখে উক্ত উপঃ প্রকল্প বাস্তবায়নে (এ আই এফ-২) এর অন্যতম শর্ত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় পীরগঞ্জ উপজেলা কয়েকটি (সি আই জি) মহিলা (ফসল) সমবায় সমিতি রয়েছে।

যার মাধ্যে প্রান্তিক কৃষক জনগোষ্ঠির মাঝে (এন এ টি পি-২) প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আওতায়ায় কৃষি কাজে ব্যবহৃত কৃষি সরঞ্জাম যা কৃষি কাজের ব্যবহারের জন্য দেওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমিতির নামে দেওয়ার কথা থাকলেও তাহা টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় পরিনত হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলায় ২নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নে উত্তর মালঞ্চা গ্রামে, ( সি আই জি) মহিলা ফসল সমবায় সমিতিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায় ঐ সমিতির সভাপতি লাবনী রানী জানান একই সমিতির সদস্য সহরানী ও বাবুল দেবের স্ত্রী অমিতার নামে ঐ (সি আই জি) সমিতিতে ২টি পাওয়ার টিলার ও একটি পাওয়ার তেসার (মাড়াই মেশিন) ও ফুট পাম্প দুটি পেয়েছে।

এরই মধ্যে সমিতির নামে থাকা পাওয়ার টিলারটি অমিতার স্বামী বাবুল দেব ৭০,০০০/- টাকার বিনিময়ে নিজ নামে ক্রয় করেছেন বলে জনান। দ্বিতীয় পাওয়ার টিলারটি সহরানীর নামে থাকলেও উক্ত পাওয়ার টিলারটি ঐ সমিতির দায়ীত্বরত উপজেলার কৃষি অফিসের উপ-সহকারী পংকজ সরকার এর কাছে আছে বলে জানান সহরানী ও তার স্বামী রবিন্দ্রদেব। পংকজ এর কাছে থাকা পাওয়ার টিলারটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সত্য গোপন করে আমতা আমতা ভাব নিয়ে এক পর্যায়ে সহরানীর স্বামী রবিন্দ্রদেব সাংবাদিকদের সামনে সত্যটি প্রকাশ করেন যে ঐ পাওয়ার টিলারটি পংকজ নিয়ে গেছে না বিক্রি করে ফেলেছে আমাদের জানা নেই।

আবারো উক্ত সমিতির সভাপতি লাবনী রানীর কাছে আবারো জানতে চাওয়া হলে তিনি আরাল থেকে সাংবাদিকদের দেখে পংকজ বাবুকে ফোন করেন এক পর্যায়ে ফোন কেটে দিয়ে সমিতি সম্পর্কে ভালো আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে লাবনী রানী আবারো পংকজ বাবুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, পংকজ বাবু জানতে চান আরেকটি পাওয়ার টিলার দেখতে চেয়েছে কি না। দেখতে চাইলে বলবা পাওয়ার টিলারটি আত্মীয়র কাছে আছে। পংকজ আরোও বলেন সাংবাদিকরা তোমাদের উপকার করবেনা, পারলে তোমাদের বাঁশ দিবে। এরপর উপ-সহকারী পংকজ সরকারের কাছে এই বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর পীরগঞ্জ উপজেলার একই ইউনিয়নের আকাশীল গ্রামে গিয়ে দেখা যায় (সি আই জি) মহিলা ফসল সমবায় সমিতির সভাপতি রঞ্জনা রানী সহ বাকি সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে একই নিয়মে এই (সি আই জি) সমিতিটিতে কৃষি সরঞ্জামাদি পেয়ে থাকলেও আর্থিক অনিয়মের গরমিল পাওয়া গেছে।

এরপর উপজেলার ৫নং সৈয়দপুরর ইউনিয়নের হরিটা গ্রামে গেলে ‘হরিটা সুন্দরপাড়া (সি আই জি) পুরুষ ফসল সমবায় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর জানান দুইটি পাওয়ার টিলার একটি পাওয়ার তেসার (মাড়াই মেশিন) ২টা ফুট পাম্প এগুলো আমি পেয়েছি, আমার কাছে আছে। তবে এলাকাবাসী জানান পাওয়ার টিলার, পাওয়ার তেসার (মাড়াই মেশিন) এই দুটি কৃষি সরঞ্জাম তিনি বিক্রি করে ফেলেছেন। সরেজমিনে গিয়ে তা পাওয়া যায়নি। পাওয়ার টিলার ও পাওয়ার তেসার (মাড়াই মেশিন) মোস্তাফিজুর এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি সেটা পাশের উপজেলায় দিয়েছি, কেন বিক্রি করলেন কি কোন সমস্যা হবে? অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হইতে স্পষ্ট লেখা আছে এই সমস্ত কৃষি সরঞ্জামগুলি একে বারেই বিক্রয় যোগ্য নহে।

তবে সমিতির মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের সহ এলাকার অন্যান্য কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যাবে। যাহা (এন এ টি পি -২ )প্রকল্পের (এ আই এফ-২) ফান্ড হতে প্রাপ্ত বিক্রয় যোগ্য নহে বলে উক্ত প্রকল্পে স্পষ্ট বলা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আওতায় এই সমস্ত সরঞ্জাম পেতে হলে সি আই জি সমিতি গঠনের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর আবেদন করতে হবে। প্রতিটি (সি আই জি) সমিতিকে ব্যাংক একাউন্টের সদস্যদের নিজস্ব টাকা জমা করার পর সরকারী ভর্তুকির টাকা ঐ একাউন্টে আসার পর কৃষি সরঞ্জামের জিনিস পত্র কৃষি অফিসের সহযোগিতায় নিজেরাই ক্রয় করতে পারবেন। অথচ (এন এ টি পি -২) প্রকল্পের এ আই এফ -২ কার্যক্রম প্রকল্পে প্রাপ্ত টাকা নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত (সি আই জি )সমিতিগুলো সরকারের দেওয়া ভর্তুকির টাকা ৭০% আর সমিতির জমানো ৩০% টাকা একত্র করলে কৃষি সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে পারবে। যদি একটি (সি আই জি) সমিতি তাদের একাউন্টে ১,৬৬,০০০/- টাকা জমা করেন তাহলে সরকার তাদেরকে ভর্তুকি বাবদ ৩,৮৭,৩৩৩/- টাকা পাবে। এখন সর্বমোট দাড়ায় = ৫,৫৩,৩৩৩/-।

এতে দেখা যায় বর্তমান বাজার মূল্যে ঐ পাওয়ার টিলার পাওয়ার তেসার ফুট পাম্প এর এক একটির মূল্য দাড়ায় যেমন, পাওয়ার টিলার ২টির মূল্য = ২,৪০,০০০/-, আর পাওয়ার তেসার (মাড়াই মেশিন) ১টি ১,৮০,০০০/- ও দুটি ফুটপাম্প ৮,০০০/- এখন সর্বমোট মূল্য দাড়ায় ৪,২৮,০০০/- টাকা। সরকারি ভর্তুকি দেওয়া টাকা আর কৃষকদের সমিতির জমানো সহ মোট ৫,৫৩,৩৩৩/- থেকে ৪,২৮,০০০/- টাকা বাদ দেওয়া হয় অবশিষ্ট টাকা থাকে ১,২৫,৩৩৩/-। অভিনব কায়দায় কৃষি অফিসের কতটা অনিয়ম দূর্ণীতি হলে ১,২৫,৩৩৩/- উধাও হয়ে যায় এটাই উপজেলা বাসীর প্রশ্ন?। উক্ত (সি আই জি) সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই টাকার সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। নগদ অর্থ এবং চেক তারা তুলে দিয়েছেন কৃষি অফিসার এস এম গোলাম সারওয়ার ও উপ-সহকারী পংকজ সরকারের হাতে।

উপজেলা কৃষি কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়ে, আমিও ছিলাম। দূর্ণীতি অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কথায় দূর্ণীতি অনিয়ম হয়েছে আমাকে আগে দেখাও। কথা শেষে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কৃষকের পাশে আমরা আছি।

সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম দূর্নীতি থাকলে কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলেন। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম গোলাম সারওয়ারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান,আচ্ছা সাক্ষাতে বলবনে ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন ফোনে এত কথা বলা যায় ভাই এটা একটা প্রক্রিয়া সাক্ষাতে বলব আমি মিটিংয়ে আছি, মিটিং শেষে ফোন দিচ্ছি।

error: Content is protected !!