হোম » প্রধান সংবাদ » সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলে গো-খামারীরা বিপাকে পড়েছে

সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলে গো-খামারীরা বিপাকে পড়েছে

সুজন সরকার, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজ ও গবাদি পশু লালন-পালন করে
জীবিকা নির্বাহ করে। সারা বছরে গবাদিপশু লালন-পালন করে বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে চলে পরিবার। অনেকে দুধেল গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। কিন্তু এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও মাঠ ঘাট তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুগুলো আগের মতো খাবার না পাওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে।

 

চলতি বন্যায় জেলার ৪ হাজার ৭২০ হেক্টর ভুমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে আছেন চরাঞ্চলের খামারীরা। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নসহ জেলার ৩০টি ইউপির চরাঞ্চলের গবাদি পশুগুলো খাবার না পেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য বন্যা কবলিত এলাকায়। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সয়াশাখা গ্রামের জুরান আলী (৫৫) নামের এক গো-খামারী বলেন, গরীবরা সাহায্য পায় না। সাহায্য আসে বড়লোকের জন্য। বন্যায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। প্রায় ৩ মাস ধরে পানিবন্ধী থাকায় অন্য কোনো কাজও করতে পারছেন না।

 

কোনো সহায়তা না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনমতে দিন পার করছেন। গো-খাদ্যের সংকট থাকায় তাঁর পাঁচটি গরুও অর্ধাহারে-অনাহারে থাকে। খামারী আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা একবেলা খাবার না পেলে ক্ষুধায় ছটফট করি। বোবা প্রাণী ক্ষুধার জ্বালা নীরবে সহ্য করে, কিছু তো বলতে পারে না। কর্ম নেই তার উপর গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু-ছাগলের ঠিকমত খাবার দিতে পারছি না। আয় না থাকায় নিজেরাই খাদ্যের সংকটে পড়েছি। বন্যায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন গবাদিপশু বাঁচিয়ে রাখতে পারব কি না, আল্লাহই জানেন। বন্যা কবলিত আবুল হোসেন বলেন, দুটি গাভী পালন করছিলাম। প্রতিদিন দুটি গাভী ১৫ কেজি দুধ দিতো। কিন্তু এখন এক কেজি দুধও দেয় না। সঠিকভাবে খাবার দিতে না পারায় দুধ কমে গেছে। এখন শুধু বাছুরগুলো দুধ খেয়ে বেঁচে আছে।

 

মেছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, চরের গো-চারণ ভূমি ও ঘাস উৎপাদনের জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট রয়েছে। কিন্তু গো- খাদ্যের। কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় গবাদিপশুর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কাঁচা ঘাসের উৎস নষ্ট হওয়ায় মারাত্মক গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকের হাতে টাকা না থাকায় শুকনা খাবারও অনেকে কিনে দিতে পারছেন না। পশুগুলোর রোগবালাইয়ে আক্রান্ত না হতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া আছে।

 

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে কমে যাচ্ছে। এভাবে পানি কমতে থাকলে ১০/১২ দিনের মধ্যেই নিম্নাঞ্চলের পানি নেমে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

error: Content is protected !!