হোম » প্রধান সংবাদ » ভালো নেই রাবি টুকিটাকি চত্বরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

ভালো নেই রাবি টুকিটাকি চত্বরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

আবু সাঈদ সজল, রাবি: করোনার লাগামহীন দাপটে জনজীবনে নেমেছে ক্লান্তির অমানিশা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে। এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে দুরূহ জীবন যাপন করছেন ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ফুটপাত দোকানের মালিক-কর্মচারীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য আড্ডার প্রাণকেন্দ্র ধরা হয় টুকিটাকি চত্বরকে। এ চত্বরে  চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে শিক্ষার্থীদের আনাগোনায়  চারপাশ মেতে উঠতো সারাক্ষণ। কিন্তু করোনা সেই আনন্দঘন মুহুর্তগুলোর বুকে ভাঁটা ফেলেছে। ভালো নেই এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে চত্বরের হোটেল ব্যবসায়ী বাবু মিয়া দুঃখ ভরা কন্ঠে বলেন, আজ পাঁচ মাস, ক্যাম্পাসে যেতে পারি না। নেই হোটেল ঘরটি। সেই ছোট্টকাল থেকে ক্যাম্পাসের গন্ডিতেই কাটিয়ে আসছি শৈশব, কৈশোরে ও বার্ধক্যের এই জীবনটা। শত শত শিক্ষাক ও শিক্ষার্থীর সংস্পর্শে থেকে পেয়েছি স্নেহ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। প্রতিদিন হাজারো তারুণ্যের সংস্পর্শে থেকে নিজের মধ্যে কখন বার্ধক্যের ছাপ খুঁজে পাইনি। নিজের জীবনের সবটুকু সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সেবায় অতিবাহিত করে এসেছি। দিনশেষে যেটুকু আয় রোজগার হয়েছে। সেটুকু দিয়েই বড় আনন্দে দিন কেঁটেছে। কোন দিন লাভের দেখা না মিললেও শিক্ষার্থীদের হাসিখুশি মুখগুলো দেখে ভুলে গিয়েছি দুঃখের কথাগুলো। কিন্তু ক্যাম্পাসবিহীন এই পাঁচ মাসে যেন আজ নিজেকে অনেক বৃদ্ধ মনে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, খেয়ে না খেয়ে কাটছে দিন। ক্যাম্পাসের হোটেলটাই ছিল পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। করোনার কারনে সেটাও আজ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে এসে তেমন আর কোন কাজও করতে পারি না। দিনে দুমুঠো খেয়ে বাঁচা টাও যেন আজ দুরূহ হয়ে পড়েছে। পাই না আর আগের মত মানসিক প্রশান্তি।

টুকিটাকি চত্বরের হোটেলবয় রনি বলেন, কোনরকম খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন কাজকর্মহীন থাকায় অভাব অনটনে ধার-দেনা আর সাহায্য সহযোগিতায় দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হাসিতামাশা আর খুনসুটিতে দিন-রাত মেতে থাকত টুকিটাকি চত্বরটি। তাদের সংস্পর্শে থেকে ভালই কাটছিল দিনগুলো। দিন শেষে যে টাকা পেতাম, সেটাতেই কোরমনরকম চলত সংসার। আজ সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা যেন জীবনটাকে বড়ই ছোট করে দিয়েছে আজ।

টুকিটাকি চত্বরের কম্পিউটার দোকানদার আতাবুল ইসলাম বলেন, অর্ধ অনাহারে কাঁটছে দিন। প্রতিটি মুহুর্তই যেন আজ হতাশা আর দুর্বিষহে ভরপুর। রাত কাটে উৎকন্ঠায়। দীর্ঘ পাঁচ মাসে জীবনকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছি। অভাব অনটনে বিপর্যস্ত জীবন কাটছে প্রতিনিয়ত। কবে আবার মুখরিত হবে টুকিটাকি চত্বরেটি? কবে আবার দুঃখ দুর্দশা মুক্ত একটা ভোরের দেখা পাব? এই প্রত্যাশায় প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাই।

Loading

error: Content is protected !!