হোম » প্রধান সংবাদ » রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস কমছে উপস্থিতির হার!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস কমছে উপস্থিতির হার!

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে আশঙ্কাজনক হারে কমছে উপস্থিতির হার । শুরুর দিকে উপস্থিতি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও মাস শেষে এখন ৩৫-৪০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডেটার মূল্য বেশি ও গতি কম হওয়ায় প্রথম থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস থেকে বাইরে ছিল। এর মধ্যে বন্যায় শিক্ষার্থীদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তবে কিছু শিক্ষকের দাবি, অনলাইন ক্লাসের ব্যপারে শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাবও উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে দায়ী।

গত ৯ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস বন্ধ ছিল। ৬ আগস্ট থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। ঈদুল আযহার বন্ধ শেষে উপস্থিতি কমে গিয়েছে। যদিও অনুষদ ভেদে বেশ পার্থক্য দেখা গেছে। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৮০ থেকে ৭০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। বিজ্ঞান অনুষদে অধিকাংশ বিভাগে উপস্থিতির হারও কমেছে। কৃষি অনুষদ ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশের গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া কলা অনুষদের দু’একটি বিভাগে ক্লাস শুরু না হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ অনুষদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদেও উপস্থিতির হার নিম্নমুখী বলে অনুষদ সূত্রে জানা গেছে। ব্যবসায় অনুষদেও উপস্থিতি ৩৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  ক্লাসে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছে। এদের অনেকেরই ল্যাপটপ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের গতি নিয়ে সমস্যা। ডেটা ক্রয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা তো আছে, বন্যার কারণেও উপস্থিতি আশঙ্কজনক হারে কমেছে।

শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশ অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকার পেছনে ইন্টারনেট গতি ও বন্যা সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহকেও দায়ী করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, অনলাইন ক্লাস উপস্থিতি হিসেবে কাউন্ট করা হবে না, তাই অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, কৃষি অনুষদের একটি বিভাগে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলে শতাধিক শিক্ষার্থী বিপক্ষে মতামত দেয়। এছাড়া সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও কলা অনুষদ ও চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাস না করার পক্ষে। এর মধ্যে উত্তর বঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা প্লাবিত হওয়ার সেখানকার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। যার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও কম।

অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল’র (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল বলেন, স্মার্ট ফোন না থাকা, গ্রামে ফোর জি না পাওয়া, ডেটার উচ্চ মূল্য এসব কারণে প্রথম থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাহিরে ছিল। সম্প্রতি বন্যার কারণে উপস্থিতির হার আরও কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে।

আইকিউএসি’র এ পরিচালক আরও বলেন, বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা খুব দ্রুত অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু এক মাস শেষ হয়েছে। আমরা বিভাগগুলো থেকে গত এক মাসের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।

error: Content is protected !!