হোম » প্রধান সংবাদ » আমতলীতে কদর নেই তেঁতুল গাছের খাটিয়ার।

আমতলীতে কদর নেই তেঁতুল গাছের খাটিয়ার।

এইচ এম কাওসার মাদবর:  পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কদর বেড়ে যায় তেঁতুল গাছের খাটিয়ার। কিন্তু এ বছর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে মানুষ পশু কোরবারীতে কেমন আগ্রহ নেই। ফলে তেঁতুল গাছের তৈরি এ খাটিয়ায় এ বছর তেমন কদর নেই। এতে বিক্রেতাদের ব্যবসায় চরম মন্দা চলছে।
জানাগেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা আসলেই কদর বাড়ে খাটিয়ার। ঈদুল আজহায় কোরবানীর পশু জবেহ করে মাংশ ছাটাইয়ে (টুকরা) প্রয়োজন হয় খাটিয়ার। খাটিয়ার সহায়তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সহজেই মাংশ ছাটাই করা যায়। সব গাছে খাটিয়া তৈরি করা যায় না। খাটিয়া তৈরির জন্য প্রয়োজন তেঁতুল গাছের।  অন্য গাছের খাটিয়ায় পশুর মাংশের সাথে গাছের গুড়ি উঠে মাংশের মান নষ্ট হয়ে যায়।
তাই ঈদুল আজহা আসলেই তেঁতুল গাছের চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে তেতঁুল গাছ সংগ্রহ করে স্ব-মিলে খন্ড খন্ড করে খাটিয়া তৈরি করে। এক সিএফটি গাছ ৩ ’শ টাকায় ক্রয় করে। ওই গাছে ৩-৪ টি খাটিয়া তৈরি করা যায়। ছোট, মাঝারি ও বড় এ তিন ধরনের খাটিয়া রয়েছে। ছোট খাটিয়া ১’শ টাকা, মাঝারি ১’শ ৫০ টাকা এবং বড় খাটিয়া ২’শ ৫০ টাকা। তবে তেঁতুল গাছ পাওয়া বড়ই দুস্কর বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আমতলী পৌর শহরের বটতলা, পুরাতন বাজার, পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা ও কাঠ বাজারে এ খাটিয়া বিক্রি হয়। এছাড়া বিক্সা-ভ্যানে করে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা ও খাটিয়া বিক্রি করেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে মানুষের পশু কোরবানীতে তেমন আগ্রহ নেই। ফলে এ বছর খাটিয়ার চাহিদা কমে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের খাটিয়া তৈরিতে তেমন আগ্রহ নেই।
আমতলী ইউএনও অফিস সংলগ্ন স্থানে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী ছালাম ও আবদুল হক বরগুনা থেকে ভ্যানে করে খাটিয়া বিক্রি করতে আসেন। তারা বলেন, এ বছর খাটিয়ার তেমন কদর নেই। মানুষ খাটিয়া কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।  বৃহস্পতিবার আমতলী পৌর শহরের বটতলা ও পুরাতন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, কাঠ ব্যবসায়ীরা খাটিয়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে। কিন্তু তেমন ক্রেতা পাচ্ছে না।
কাউনিয়া গ্রামের মোঃ জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, বর্তমানে খাটিয়ার চাহিদা কম। চাহিদা কম থাকায় দামও একটু কম। মাঝারি ধরনের একটি খাটিয়া ১’শ ৫০ টাকায় ক্রয় করেছি। খাটিয়া ব্যবসায়ী জাফর মৃধা বলেন, কোরবানী এলেই খাটিয়ার কদর ও চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সারা বছর এ খাটিয়ার তেমন চাহিদা থাকে না। কিন্তু এ বছর খাটিয়ার তেমন চাহিদা নেই। গত বছর কোরবানীতে তেঁতুল গাছের ৭৫ টি খাটিয়া বিক্রি করেছি। আর এ বছর সবেমাত্র ১০ টি খাটিয়া তৈরি করেছি।
স্ব-মিল শ্রমিক শাহ আলম হাওলাদার, জুয়েল হাওলাদার, ইসমাইল সিকদার, শাহীন ও লোকমান বলেন, এক সিএফটি তেঁতুল গাছ কিনতে লাগে ৩’শ টাকা। ওই এক সিএফটি গাছে চারটি খাটিয়া হয়। চারটি খাটিয়া কম হলেও ৬’শ থেকে ৭’শ টাকায় বিক্রি করা যায়। এতে ভালোই লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু কোরবানী শেষ হয়ে গেলে এ খাটিয়ার আর কদর থাকে না। সারা বছরে দু’চারটি বিক্রি হলেও পারে আর না হলেও পারে। তারা আরো বলেন, তেঁতুল গাছ পাওয়াও খুবই দুস্কর।
আমতলীর কশাই মোশাররফ গাজী বলেন, মাংশ ছাটাইয়ের (টুকরা) জন্য খাটিয়ার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। খাটিয়া ছাড়া মাংশ ছাটাই করা যায় না। তিনি আরো বলেন, সব গাছ দিয়ে খাটিয়া তৈরি হয় না। মাংশটা ভালোভাবে ছাটাই করার জন্য প্রয়োজন তেঁতুল গাছের খাটিয়ার। অন্য গাছ দিয়ে খাটিয়া তৈরি করলে মাংশের সাথে খাটিয়ার গুড়ি উঠে আসে। এতে ওই গাছের গুড়ি মাংশের সাথে মিশে মাংশের মান নষ্ট হয়ে যায়। আর তেঁতুল গাছের খাটিয়ার মাংশ ছাটাইয়ে কোন গাছের গুড়ি উঠে না। এতে মাংশ ভালো থাকে। তাই তেঁতুল গাছের খাটিয়ার কদর বেশী।
error: Content is protected !!