হোম » প্রধান সংবাদ » করোনাকালীন ঘরে বসে পরীক্ষা

করোনাকালীন ঘরে বসে পরীক্ষা

জুলফিকার বকুলঃ পৃথিবীতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাই হচ্ছে রাশি। আর যা দিয়ে এই পরিমাপের পরিমান নির্ণয় করা হয় তাকে বলে একক। জ্ঞান কোন রাশি নয়, কারণ ইহা পরিমাপের কোন একক নেই। তবে জ্ঞান পরিমাপের জন্য সাধারণত পরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তাই জ্ঞানের পরিধি নির্ণয়ে পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। করোনার প্রভাবে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা অর্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া যা জীবন ব্যাপি চলতে থাকে। তাই কোন অবস্থাতেই এই কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে না।

মানুষ মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে। শিক্ষাও যদি মৌলিক অধিকার হয় তবে শিক্ষার্থীকে সেই সংগ্রাম করে স্ব-শিক্ষিত হতে হবে। এর জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা অবলোকন করে পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ভাল-মন্দ পার্থক্য করার বিচক্ষণতা নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে। সমাজে একজন শিক্ষিত মানুষ তার পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছে আর সাক্ষর জ্ঞানহীন একজন মানুষ তার পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছে। এই বাস্তবিক চিত্রগুলো শিক্ষার্থী চেতনাকে শিক্ষার প্রতি অনুরাগী করে তুলবে। আপন চেতনাবোধের তাড়না তাকে পরিপূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিবে। তাই ঘরে বসে সময় নষ্ট করা মানেই নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করা।

নিয়মিত অধ্যয়ণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী যদি তার গতিশীলতা (procrastination) বজায় রাখতে পারে তবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক না কেন তার সৃষ্টিশীল চিন্তাজগতে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। শুধু প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল ও নিয়মিত অধ্যয়ণ। এ সময় শিক্ষার্থীরা মূলপাঠ্য বই যদি বেশি বেশি পড়ে এবং সৃজনশীল প্রশ্নকাঠামোর আলোকে নিজে নিজে উত্তর তৈরি করার চেষ্টা করে তবে তাদের মধ্যে সৃজনশীল প্রতিভা বিকশিত হবে। যখন সে একটি প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে তৈরি করতে পারবে তখন তার মধ্যে নতুন নতুন উত্তর তৈরি করার প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে। মূল বই শুধুমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। মূল বইয়ের ইঙ্গিত, তথ্য, সূত্র ইত্যাদি তার নতুন সৃষ্টিতে প্রেরণা সহ সমাধানের পথ খুজে দিবে। এরপর শিক্ষার্থীর কাজ হবে নিজে নিজে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন সংগ্রহ করে একা একা পরীক্ষা দেওয়া।

নিজেই পরীক্ষকের ভুমিকায় নিরপেক্ষ রোল-প্লে করা। যখন সে ভাল নম্বর পেতে থাকবে তখন তার মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার আনন্দ আরো বেড়ে যাবে। এক সময় তার মধ্যে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। আর এই আত্মবিশ্বাসই তাকে নিয়মিত অধ্যয়ণর জন্য perfect করে তুলবে। প্রশ্নপত্র সংগ্রহের জন্য শিক্ষক, বন্ধু -বান্ধব, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তবে কোন ভাবেই গাইড study করা যাবে না। কারণ, গাইড বই মানেই অন্যের সীমাবদ্ধ মেধা সম্বলিত একটি প্যাকেজ। তোমার মেধা সীমাহীন। তুমি আরো মজার মজার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান তৈরি করতে পার। আর এই সৃষ্টিই তোমাকে সৃজনশীল করে তুলবে। হতে পারে তোমার অভিভাবক সাক্ষর জ্ঞানহীন। কিন্তু তুমি তো শিক্ষা গ্রহণ করছো। নিজের মাঝে আত্মোপলব্ধির স্তরকে আরো একধাপ এগিয়ে নাও। তুমিও পারবে।

আইনস্টাইন পিছনের বেঞ্চের স্টুডেন্ট ছিল। তাঁর মা ভেবেছিল তার সন্তানকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। কে জানতো সেই হবে বিশ্বের নামকরা নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী। ভুলে যেওনা তোমার মধ্যেও লুকিয়ে আছে অজস্র প্রতিভা। শুধু তোমার ইচ্ছ ও কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাও। বর্তমান সময়ের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট মেধাবী। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের পদগুলোতে এখন মেধাবীরা স্থান পাচ্ছে। তুমিও পাবে। অন্যথায়, তোমার নিজ কাজেও তুমি মেধা ও দক্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। আসলে তোমার প্রয়োজন বাস্তবমুখী ও প্রগতিশীল শিক্ষার সাথে নিজেকে একাকার করে দেয়া। ঘরে বসে দেয়া প্রতিটি পরীক্ষার উত্তর পত্রগুলো নোট করে সংগ্রহ করে রাখো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্যারকে দেখাবে।

স্যারের দেয়া নম্বর পত্রের সাথে তোমার দেয়া নম্বর মিলিয়ে নিবে। তুমি তোমার অগ্রগতি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে। মূলপাঠ্য বই থেকে ছোট ছোট প্রশ্ন তৈরি করে তার উত্তরগুলো খাতায় লিখে রাখবে। কোন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে সমস্যা হলে ফোনের মাধ্যমে স্যারদের কাছ থেকে জেনে নিতে পার। মনে রাখবে,বেশিরভাগ সময় তুমি তোমার কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখাটাই নিয়মিত অধ্যয়ণ। তাই নিজের মধ্যে হালকা Study Stress ( অধ্যয়ণ চাপ) তৈরি করবে। একমাত্র তুমিই তোমার ভবিষ্যৎ কে সুন্দর ও স্বার্থক করে গড়ে তুলতে পার। সুতরাং, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের মাঝে জানা ও শেখার আগ্রহ তৈরি কর।মনে রাখবে Quality education for better life. তোমার একটি উন্নত জীবন ব্যবস্থা একটি উন্নত জাতি ও দেশ গঠন করতে পারে। বিশ্বে সম্মানের সাথে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে স্বপ্নজয়ী বাংলাদেশ।

লেখকঃ
জুলফিকার বকুল
শিক্ষক, ঢাকা ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল
ডুয়েট ক্যাম্পাস,গাজীপুর।

error: Content is protected !!