হোম » প্রধান সংবাদ » তাহিরপুরে স্থগিত হলো পাহাড়ি ঢলে আগত বালিপাথর ও চুনাপাথর বিক্রির উন্মুক্ত নীলাম কার্যক্রম

তাহিরপুরে স্থগিত হলো পাহাড়ি ঢলে আগত বালিপাথর ও চুনাপাথর বিক্রির উন্মুক্ত নীলাম কার্যক্রম

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ভিএমডির মহাপরিচালক মোঃ জাফর উল্লাহ গত
১২ জুন পাথর,সিলিকা বালুসহ খনিজ সম্পদের অবৈধ উত্তোলন,বিক্রয় ও পরিবহণ বন্ধকরণ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেই অফিসিয়েল আদেশের লংঘনক্রমে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা বালু পাথর ও চুনাপাথর প্রভৃতি খনিজ সম্পদ অপসারনের লক্ষে আহবানকৃত তথাকথিত উন্মুক্ত নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২৮ জুলাই বুধবার সকাল ১০টায় টেকেরঘাট রেস্টহাউস প্রাঙ্গনে এ নিলাম বিজ্ঞপ্তি আহবাণ করা হয়। যদিও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ নিলাম আহবাণ করেন।

কিন্তু কথিত নিলাম আহবাণ করার ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে স্থানীয় জনমনে। এলাকাবাসী বলেন, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ভিএমডির মহাপরিচালক মোঃ জাফর উল্লাহ গত ১২ জুন পাথর,সিলিকা বালুসহ খনিজ সম্পদের অবৈধ উত্তোলন,বিক্রয় ও পরিবহণ যেখানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সেখানে জনস্বার্থের প্রশ্ন উত্থাপন করে কিভাবে কারা রাতারাতি মন্ত্রণালয়,ভিএমডি,জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় পর্যন্ত আবেদন ও ফাইলপত্র ঘাটিয়ে তরিঘড়ি করে এই নিলাম আদেশ হাসিল করেছিল। কেউ কেউ বলছেন সীমান্ত এলাকার একজন সাংবাদিক পাথরখেকোদের দালালী করে ঐ নিলাম কার্যক্রমের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে একটি জাতীয় পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ করে।

ঐ দালাল সাংবাদিকের আরো দুজন সহযোগী সাংবাদিক যারা জেলা সদরে কর্মরত তারাও নিলাম কার্যক্রমের পক্ষে প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করে। বিনিময়ে তারা পাথরখেকো চক্রের কাছ থেকে লাভ করে মোটা অংকের অর্থ। কিন্তু অদৃশ্য আরেক অবাঞ্চিত শক্তির হস্তক্ষেপে মন্ত্রণালয় ও ভিএমডিতে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করে তথাকথিত নিলাম কার্যক্রম নস্যাত করে দেয়া হয়েছে।

ফলে পাথরখেকো ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট দালালদের স্বরুপ উদঘাটন হয়েছে। প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে প্রায় ২২ লাখ ঘনফুট বালু,২৭ হাজার ঘনফুট পাথর,১ হাজার ঘনফুটের চাইতে বেশী চুনাপাথর সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ছড়া দিয়ে ভেসে আসে। পরিসংখ্যানের এ চিত্র কেউ মেনে নানিলেও এটা সত্য যে,উপজেলার বাদাঘাট,শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের এবং যাদুকাটা নদীর উভয় তীরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম এবং

চানপুর,নয়াছড়া,বুরুঙ্গাছড়া,বড়ছড়া,লাকমা,চারাগাঁও,কলাগাঁও,রঙ্ধসঢ়;গুছড়া সহ বিভিন্ন সীমান্ত ছড়া দিয়ে ভারতের মেঘালয় হতে ভেসে আসে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বালি পাথর ও চুনাপাথর। এসব খনিজ সম্পদ সীমান্ত জনপদের বিভিন্ন জনবসতি ও ফসলি জমিতে স্তুুপীকৃতভাবে পড়ে থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে জনস্বার্থে দ্রæত অপসারনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বছর বছর যাবৎ এ প্রয়োজন পূরন করে থাকেন স্থানীয় জনসাধারন ও বালি পাথর কোয়ারীর ইজারাদার ও বালি পাথর উত্তোলনে নিয়োজিত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। নতুন করে নিলাম নেয়ার মাধ্যমে নতুন ইজারাদার নিয়োগ করার মধ্যে দিয়ে একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত ছিলেন কয়েকজন গডফাদার।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠে। সাংবাদিক আলম সাব্বির বলেন,বালি পাথর সরানো হলে পাহাড়ি বর্ষনে জনপথ আবারো বিধ্বস্ত হবে। আব্দুল্লাহ আল হান্নান বলেন,সরকারিভাবে অনুমোদন দেয়ার অভিনব কৌশল নিলাম। মোঃ রুকন মিয়া বলেন,স্থানীয়দের গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে এমন কর্মকান্ড। সাংবাদিক শামস শামীম বলেন,অর্থনৈতিক লাভের সঙ্গে এখানে ধসের আশঙ্কাও আছে।

 

প্রশাসন দুর্যোগে ব্যবসার জন্য কেন উদ্যোগী বুঝিনা। নিলাম যারা নিবে তারা বেশি লাভের আশায় আরো খনন করতে পারে। তাছাড়া যুগযুগ ধরে ছড়া নালার ভারসাম্য হিসেবে রক্ষাকারী পাথরগুলো সরালে আরো বিপর্যয় ডেকে আনবে। এদিকটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন,আগ্রহী উপযুক্ত নিলামগ্রহীতা ও কাঙ্কিত দরমূল্য না পাওয়ায় আমরা নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছি।

Loading

error: Content is protected !!